গ্রেপ্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। এক-এগারোর সুনামি দেশের প্রধান দুই দলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিলেও আওয়ামী লীগের বিপদ তুলনামূলক কম ছিল। সে সময়েও সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তারপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রায় এক দশক দলের রাজনীতিতে ছিলেন পেছনের সারিতে।
এখন সংস্কারের সময়ে এসে গ্রেপ্তার হলেন সেসময়ের সংস্কারবাদী নেতা সাবের। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে তথ্য জানা জায়নি। তার বিরুদ্ধে অনেক মামলাই আছে। গত সেপ্টেম্বরে এক ছাত্রদল নেতাকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে প্রায় নয় বছর আগে ওই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি নুরুজ্জামান জনি। সেপ্টেম্বরে তার বাবা ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে সাবেরসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক বড় চমকের নাম সাবের হোসেন চৌধুরী। ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফর হোসেন পল্টুকে মনোনয়ন না দিয়ে ঢাকা-৬ থেকে সাবের হোসেনকে মনোনয়ন দিলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারইর থেকেই ঢাকা-৯ আসনে দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
ছিলেন জাঁদরেল পার্লামেন্টারিয়ান। প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে ২০১৪-২০১৭ সালে তিনি সর্বপ্রথম জেনেভা ভিত্তিক ইন্টার-পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন (আইপিইউ) এর ২৮ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৯ সালে তিনি প্রথমে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত হন এবং পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। শেষ বার তাকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় দেয়া হয়।
জাতীয় সংসদ, মন্ত্রী পরিষদ ছাড়াও ক্রীড়া প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো তার। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। তার উদ্যোগে বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পায়।
এত এত অর্জন সব বিফলে যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতির স্নেহধন্য সাবের ১/১১ তে সংস্কারপন্থী হিসেবে তকমা পেয়ে রাজনীতিতে আড়ালের বাইরে চলে যান। রাজনীতিতে তিনি গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেন। কিন্ত তিনি থেমে না গিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা অব্যাহত রাখেন। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ যে ৪ বার মন্ত্রীসভা করে প্রতিটিতে আলোচনায় থাকলেও জায়গা না পাওয়া সাবেরের এবার কপাল খুলে। সে কপালও স্থায়ী হলো না বেশিদিন।
অনেকে ধারণা করছেন, আওয়ামী লীগের শেষ মন্ত্রীসভায় তার কপাল খোলার কারণ, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। আগেই হয়েছিলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত। নির্বাচনের আগেভাগে তার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন সেসময়ের মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বৈঠক শেষে তারা বলেছিলেন কথা হয়েছে পরিবেশ নিয়ে। কিন্তু আলোচনা ছিলো, মার্কিন লবিকে ‘ম্যানেজ’ করতে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। পারিবারিকভাবে তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কর্ণধার। ব্যবসা আর সংসদসংক্রান্ত কার্যক্রমের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় রাজনীতির মাঠে টিকে ছিলেন তিনি। এখন যখন খোদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিই সংকটে তখন সাবের হোসেন চৌধুরীর রাজনৈতিক ভবিষত কোথায় তা দেখার অপেক্ষা।