26 C
Dhaka
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

জাতিসংঘের বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ এবং ইউএন উইমেনকে বৈচিত্র্য, সমতা, অন্তর্ভুক্তি (DEI) ও লিঙ্গ ভাবধারার ওপর গুরুত্ব না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির এক কর্মকর্তা ওয়াশিংটনের অসন্তোষ এড়াতে, কর্মীদের ভাষার ব্যবহার সংযত করার পরামর্শ দিয়েছেন। খবর রয়টার্সের

২০ জানুয়ারি পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসন থেকে, DEI এবং লিঙ্গ ভাবধারা সম্পর্কিত কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বেসরকারি খাতকেও একই পথে চলতে উৎসাহিত করছেন।

এবার তার দৃষ্টি জাতিসংঘের দিকে, যার ফলে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা উদ্বিগ্ন যে, ট্রাম্প এবং ধনকুবের ইলন মাস্ক সরকারের ব্যয় কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বেচ্ছা অনুদানের অর্থ বন্ধ করতে পারে। মাস্ক সম্প্রতি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্টে বলেছেন, আমেরিকা জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক বেশি অর্থায়ন করছে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ প্রত্যাহার করেছেন, ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা UNRWA-এর তহবিল বন্ধের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন এবং ইউনেস্কোর কার্যক্রম পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন।

জাতিসংঘের অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ, চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। জাতিসংঘের মূল বাজেটের ২২% এবং শান্তিরক্ষা বাজেটের ২৭% অর্থায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে ২.৮ বিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে, যা ঐচ্ছিক অর্থায়ন নয়।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ ও নারী সংস্থা ইউএন উইমেনের নির্বাহী বোর্ডের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র DEI এবং লিঙ্গ ভাবধারা প্রচারের বিরোধিতা করেছে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনিসেফের ইতিহাসে এই প্রথমবার, নির্বাহী বোর্ডের একটি রুটিন নথি অনুমোদনের জন্য ভোটের প্রয়োজন হয়। যুক্তরাষ্ট্র ইউনিসেফের কার্যক্রম থেকে DEI ও লিঙ্গ ভাবধারা বাদ দেওয়ার জন্য সংশোধনী আনতে ব্যর্থ হলে, ভোটাভুটির মাধ্যমে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

এ প্রসঙ্গে ইরিত্রিয়ার উপ-জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূত আমানুয়েল জর্জিও আট আফ্রিকান বোর্ড সদস্যের পক্ষ থেকে বলেন, শিশুদের পিছিয়ে না রাখার জন্য ইউনিসেফের কার্যক্রমে DEI গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক জোনাথন শ্রায়ার যুক্তি দেন, DEI এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচি কঠোর পরিশ্রম, যোগ্যতা ও সমতার পরিবর্তে বিভেদমূলক এবং বিপজ্জনক বিশেষাধিকারমূলক কাঠামো তৈরি করছে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমতে পুরুষ ও নারী—এই দুই লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, এবং লিঙ্গ ভাবধারার প্রচার সমর্থন করা হয় না। শিশুদের এ ধরনের বিপজ্জনক ধারণা থেকে রক্ষা করা উচিত।

জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া

ইউনিসেফ এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে জানিয়েছে, তারা নির্বাহী বোর্ডের কাজকে সম্মান করে এবং সদস্য রাষ্ট্রের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। ২০২৩ সালে ইউনিসেফের সবচেয়ে বড় দাতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যা ১.৪ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) নির্বাহী বোর্ডের বৈঠকের আগে WFP-এর লিঙ্গ, সুরক্ষা ও অন্তর্ভুক্তি বিভাগ এক নির্দেশনায় কর্মীদের কিছু সংবেদনশীল শব্দ এড়ানোর পরামর্শ দেয়। নির্দেশনাতে বলা হয়, সাম্প্রতিক হোয়াইট হাউসের বার্তার প্রেক্ষিতে আমরা স্পষ্ট শব্দচয়নের পরিবর্তে বর্ণনামূলক ভাষা ব্যবহারের সুপারিশ করছি।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, অনুগ্রহ করে LGBTQI+ এবং SOGIESC সম্পর্কিত শব্দ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। DEI এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দগুলো একসঙ্গে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

এই প্রসঙ্গে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র WFP-কে ৪.৪ বিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়, যা সংস্থাটির জন্য সর্বোচ্চ।

ইউএন উইমেনে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ

এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইউএন উইমেন সংস্থাকে DEI এবং লিঙ্গ ভাবধারা প্রচার না করতে চাপ দেয়। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, এগুলো নারীদের জন্য অবমাননাকর, অবিচারমূলক ও বিপজ্জনক।

সোমবার ইউএন উইমেনের নির্বাহী বৈঠকে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহাউস যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা আমাদের কাজের যে কোনো পর্যালোচনাকে স্বাগত জানাই।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউএন উইমেনকে প্রায় ১৯ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিচ বলেছেন, জাতিসংঘ তার ৮০ বছরের ইতিহাসে সবসময় তার প্রতিষ্ঠাতা সনদের মূল্যবোধ বজায় রেখেছে।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, জাতিসংঘ সনদে বলা আছে- আমরা মৌলিক মানবাধিকার, ব্যক্তির মর্যাদা ও মূল্যবোধ, এবং পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করছি।

এসএস/

দেখুন: সিরিজ জয়ের চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের; আফগানদের লক্ষ্য সমতা

পড়ুন: সিরিজে সমতায় ফিরলো বাংলাদেশের মেয়েরা

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন