26 C
Dhaka
মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫

সরকারি ত্রুটিপূর্ণ রেটিং সিস্টেম থেকে বের হতে চায় দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো

দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকরা বলেছেন সরকারের দর্শক রেটিং  সিস্টেম  ত্রুটিপূর্ণ । এই ত্রুটিপূর্ণ টিআরপি সিস্টেমের জন্য বিজ্ঞাপনদাতারা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে কম টাকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে।

তাদের পক্ষ থেকে কানতার রিসার্চ বা নেলসেন মার্কেট রিসার্চের মতো গ্লোবাল কোম্পানির রেটিং সিস্টেম প্রচলনের দাবী জানানো হয়।

বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এর ত্রুটিপূর্ণ টিআরপি সিস্টেম এর সীমাবদ্ধতায় আটকে রয়েছে। এই টিআরপি সিস্টেমটি গ্রহণ করতে এবছরের প্রথম দিকে বাধ্য করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার। 

বিএসসিএল এর এই ত্রুটিপূর্ণ টিআরপি সামগ্রিকভাবে বিজ্ঞাপন রেভেন্যু-এর উপর প্রভাব ফেলেছে – এমনটিই বলছেন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকরা।  বিএসসিএল এর প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার ফলশ্রুতিতে ভুল টিআরপি ডাটা বিজ্ঞাপনদাতাদের কম টাকায় বিজ্ঞাপন দিতে বিভ্রান্ত করছে বলে তারা জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের কাছে  গত সেপ্টেম্বরে অ্যাটকো (দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের এ্যাসোসিয়েশন) কানতার রিসার্চ বা নেলসেন মার্কেট রিসার্চের মত আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের টিআরপি পদ্ধতি চালু করার অনুরোধ জানায়।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাটকো পরিচালক নাভিদুল হক  বলেন, কোভিড মহামারিতে সরকারের পক্ষ থেকে কানতারের টিআরপি সিস্টেম বন্ধ করার আগ পর্যন্ত দু’দশক ধরে এদেশে টিআরপি সেবা দিয়ে আসছিলো কানতার। 

অ্যাটকো পরিচালক নাভিদুল হক আরও বলেন, বিএসসিএল-এর টিআরপি সিস্টেমে প্রবেশ করার পর থেকেই দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মারাত্মক সব অসুবিধার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিএসসিএল-এর টিআরপি সিস্টেম ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এমনটি হয়েছে। এই টিআরপি পদ্ধতির যে দর্শক রিপোর্টিং সহ নানান তথ্যবিভ্রাট আছে তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) পরিচালিত টিআরপি সিস্টেমের নির্ভুলতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর উদ্বেগের বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সংবাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছিলো ৭ মার্চ ২০২৪ তারিখে। ২৬ মিনিট স্থায়ী টিভি ব্ল্যাকআউটের ঘটনার সময়টুকুও দর্শক সংখ্যা রিপোর্টে গণ্য করা হয়, যা উদ্বেগজনক। 

বিএসসিএল টিভি ব্ল্যাকআউট এর কথা স্বীকার করে এবং দর্শকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য ক্ষমা চায়। এর পরও বিএসসিএল টিআরপি পরিষেবা দল বাংলাদেশি চ্যানেলগুলির টিআরপি রিপোর্ট করা অব্যাহত রেখেছে। 

বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক মিডিয়া মার্কেটিং এসোসিয়েশন (ইএমএমএ) সভাপতি মো. আনিসুর রহমান তারেক বলেছেন, রেটিংয়ের জন্য তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ১,৫০০ থেকে ২০০০ সেট-টপ বক্স সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিএসসিএল।কিন্তু আসলে মাত্র ২০০-৩০০টি সেট-টপ বক্স পরিষেবায় যুক্ত করা হয়েছে।

বর্তমানে সক্রিয় মিটারের সংখ্যা এত কম যে, টেলিভিশন চ্যানেলের বিজ্ঞাপনদাতাদের নিশ্চিত করা যাচ্ছে না যে, তাদের বিজ্ঞাপনের ২০ শতাংশও একটি নির্দিষ্ট সময়ে দেখা যাচ্ছে। 

বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক মিডিয়া মার্কেটিং এসোসিয়েশন (ইএমএমএ) সভাপতি মো. আনিসুর রহমান তারেক আরও বলেন , দর্শক সংখ্যা নির্ধারণের নির্ভুলতা না থাকার কারণে বিজ্ঞাপনদাতারা ন্যায্য মূল্য প্রদানে দ্বিধা প্রকাশ করছে। ফলে ৩৫টি চ্যানেল নিয়ে গড়ে ওঠা এই শিল্পটি ৩০ শতাংশ লোকসানে ভুগছে।

তিনি বলেন, টেলিভিশন শিল্পের বার্ষিক বিজ্ঞাপন আয় আনুমানিক ১,৫০০ কোটি টাকারও বেশি। আনিসুর অভিযোগ করেছেন যে, মহামারীর সময় কানতারের সেবা বন্ধ করার সরকারের যে সিদ্ধান্ত তা আওয়ামী লীগ সমর্থিত চ্যানেলগুলির একটি ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল।

যারা রেটিং ম্যানিপুলেট করতে এবং তাদের দর্শক সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর জন্য একটি ফাঁকিবাজি পদ্ধতি ব্যবহার করতে চেয়েছিল তারা এর পক্ষ নেয়। তিনি আরও দাবি করেছেন যে, তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাসান মাহমুদ তার নিজের টিভি স্টেশন গ্রিন টিভিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এই পদক্ষেপ নেন।

সে সময় হাসান মাহমুদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ফোন কল বা টেক্সট মেসেজ কোনটারই উত্তর দেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।

এছাড়াও, সাবেক বিএসসিএল চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে খোলা টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই ৫ কোটি টাকায় তাদের টিআরপি সিস্টেম উদ্ভাবন করার জন্য নিয়োগ করেছিলেন। তিনি সেই সময় এই সিদ্ধান্ত ও উদ্দেশ্যকে সৎ দৃষ্টিকোণ থেকে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবী করেন এবং ব্যয় করা অংক তুলনামূলকভাবে কম বলে উল্লেখ করেছিলেন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ জানান, সরকার ইতিমধ্যেই টিআরপি সিস্টেম সম্পর্কে টেলিভিশন শিল্পের অভিযোগগুলো সমাধানের জন্য একটি বৈঠক করেছে।

বিএসসিএলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি চ্যানেল থেকে মাসিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে নিয়ে সেবা কার্যকরভাবে বজায় রাখা সম্ভব না। কার্যকর সেবা বজায়  রাখতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ এবং দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজন হবে। তিনি আরও যোগ করেন যে, বিএসসিএল তাদের সেবা উন্নত করবে নাকি বন্ধ করে দিবে, সেই সিদ্ধান্ত আরও আলোচনা সাপেক্ষে নেওয়া হবে।

দেখুন: মূলধন সঙ্কটে ১১ ব্যাংক, ৮টিই সরকারি | Capital Crisis | Bank | Nagorik TV

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন