31 C
Dhaka
সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫

সাগর-রুনি হত্যার ১৩ বছর আজ: দেয়াল জুড়ে শুধুই স্মৃতি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি তার পরিবার। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি, রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ বাসায় গভীর রাতে, নির্মমভাবে খুন হন এই দুই সাংবাদিক। হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে ১৩ বছরেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি।

নানা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিকবার সময় চেয়েছে। কিন্তু, ৯৭ বার সময় নেওয়ার পরও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এই বিচারহীনতা শুধু সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের জন্যই নয়, বরং দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও একটি ভয়ংকর দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাগর-রুনি

সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো, যেমন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, বারবার এ হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, একটি সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে ১৩ বছর ধরে একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া কেবল হতাশাজনক নয়, এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়।

অন্যদিকে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, সাগর-রুনি হত্যার বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা প্রমাণ করছে, দেশে হত্যাকান্ডের মত বড় ধরনের অপরাধের বিচার কতটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (SDG) সাথে সাংঘর্ষিক

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (SDG)-১৬ হলো শান্তি, ন্যায়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশকে অবশ্যই অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, যাতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর হয় এবং সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

কিন্তু সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছরেও বিচার না হওয়া দেখাচ্ছে, বাংলাদেশ SDG-১৬ লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হুমকি: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। সাংবাদিক সংগঠনগুলো বলছে, যদি একজন সাংবাদিক ও তার পরিবারও নিরাপদ না থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়াটা আরও কঠিন হয়ে যায়।

এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে ভবিষ্যতে সত্য প্রকাশের পথে আরও বাধা আসবে। সাংবাদিকরা যদি নিজেদের নিরাপত্তা না পান, তাহলে জনগণের তথ্য জানার অধিকারও হুমকির মুখে পড়বে।

বিচারের দাবিতে পরিবার ও সহকর্মীরা

সাগর-রুনির পরিবার ও সহকর্মীরা বারবার বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের একটাই প্রশ্ন—আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে?

সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া

প্রতিবছর ১১ ফেব্রুয়ারি এলে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ১৩ বছর ধরে তদন্ত চললে সেটি কার্যকর তদন্ত বলে গণ্য হতে পারে না। বরং এটি বিচারপ্রক্রিয়ার ব্যর্থতাকে সামনে নিয়ে আসে।

সাগর-রুনি হত্যার বিচার শুধু একটি পরিবার বা সাংবাদিকদের জন্যই নয়, বরং এটি গোটা সমাজের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বাংলাদেশ যদি সত্যিই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জন করতে চায়, তাহলে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করা জরুরি। না হলে এ ধরনের নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

৫ আগস্টের পর নতুর করে দেশ গঠনের পর ন্যায়বিচারের আশায় আর কত বছর অপেক্ষা করবে পরিবার? আর কত বছর সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সময় এসেছে।

পড়ুন:ক্যারিবিয়ান সাগরে ৭.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি

দেখুন:দক্ষিণ চীন সাগরে সীমানা বিরোধ, কতটা আগ্রাসী হতে পারে চীন? |

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন