কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এলাকায় পাথর লুটের অভিযোগে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে ইসলামপুর এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয় বলে জানান কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর গত এক বছরে সাদা পাথর এলাকা থেকে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে, যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকারও বেশি। একসময়ের মনোরম পর্যটন কেন্দ্রটি এখন ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে।
পাথর লুট ঠেকাতে সাদা পাথর ও জাফলং ইসিএ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা যৌথ বাহিনীর টহল, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের চেকপোস্টে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন, অবৈধ ক্রাশিং মেশিনের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ও বন্ধে অভিযান, পাথর চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও চুরি হওয়া পাথর পূর্বের স্থানে পুনঃস্থাপন করার এই ৫ দফা সিদ্ধান্ত নেয় সিলেটের প্রশাসন।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার রাত থেকেই লুটকৃত পাথর উদ্ধার করে সাদাপাথরে নিয়ে যেতে থাকে। রাত থেকে সিলেট ভোলাগঞ্জ সড়কে যৌথবাহিনীর চেকপোষ্ট বসানো হয়। বুধবার রাতে প্রায় ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ১৩০টি গাড়ি তল্লাশি করে ৭০টি ট্রাকে থাকা প্রায় ৩৫ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত পাথর সাদাপাথরে পুন:স্থাপন করা হবে। যাতে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ও পরিবেশ পুনরুদ্ধার হয় বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার মিতা। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পাথর লুটে জড়িত প্রভাবশালী কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে মাঠে রয়েছে। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, মজুত বা পাচারে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় লুটপাট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক দল পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে, যা অনেকের মতে ‘পাথর খেকো চক্রের’ স্বার্থ রক্ষার আড়াল।
পাথর লুটের ঘটনায় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘চার বছর পরিবেশকর্মী হিসেবে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পেরেছি, এখন উপদেষ্টা হয়েও পারলাম না।’
এ ঘটনার পর সিলেট প্রশাসন নড়েচড়ে বসে এবং ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। বুধবার সাদা পাথর এলাকায় দুদকের উপপরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাতের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি দল পরিদর্শন করে। প্রাথমিক তদন্তে দুদক জানায়, পাথর লুটে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে এবং এতে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
বুধবার সন্ধ্যা রাতে সিলেট জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের সমন্বয় সভায় পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রভাবশালীদের চিহ্নিত করা ও গ্রেফতার করার অভিযান শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এই লুটপাট চলে, যা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, সিলেটের পর্যটন শিল্পকেও মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
এদিকে আজ সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরণী রক্ষায় আমরা’ নাগরিক বন্ধনের আয়োজন করেছে।
পড়ুন: তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, খুলে দেয়া হলো ৪৪ জলকপাট
দেখুন: কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গো/লা/গু/লি |
ইম/


