26.5 C
Dhaka
সোমবার, এপ্রিল ২১, ২০২৫

নিম্নস্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও কার্যকর মূল্য বৃদ্ধির দাবি

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সিগারেটের স্তর কমানো এবং নিম্নস্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও কার্যকর মূল্য বৃদ্ধির দাবী।

আজ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে, তামাকপণ্যের কার্যকর করারোপের দাবীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে সমাজের সচেতন নাগরিক, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, একাডেমিক, গবেষক, সিভিল সোসাইটি এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি ন্যাশনাল লেভেল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।

মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের হার দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৫.৩%। প্রতিবছর তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রায় ১লক্ষ ৬১হাজার প্রাপ্তবয়স্ক অকালে মৃত্ব্য রবণ করে। তাছাড়া, তামাক খাত থেকে সরকার যে পরিমান রাজস্ব আহরন করে তার থেকে ৩৪% বেশি খরচ হয় তামকের কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা বাবদ।

নিম্নস্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও কার্যকর মূল্য বৃদ্ধির দাবি
নিম্নস্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ও কার্যকর মূল্য বৃদ্ধির দাবি

দেশে তামাক ব্যবহার হ্রাস ও তামকজনিত ক্ষয়ক্ষতি নিরোসনে সভায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ-বছরের বাজেটে তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য যেসব দাবী করা হয় তার মধ্যে অন্যতম- সিগারেটের বর্তমান চারটি স্তরকে কমিয়ে তিনটি স্তরে নামিয়ে আনা অর্থাৎ নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে একটি স্তর করা এবং এ স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ৮০ টাকা নির্ধারণ করা; এছাড়াও সকল স্তরের সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক ৬৭% করার দাবী করা হয়। এছাড়া উচ্চ স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ১৩০ টাকা, এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের সর্বনিম্ন মূল্য ১৮০ টাকা কারার প্রস্তাব দেয়া হয়।

আরও জানানো হয়- উল্লেখিত তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৬ লক্ষ অকালমৃত্ব্য রোধ করা যাবে, প্রায় ১৬ লক্ষ তরুনকে ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত রাখা যাবে, প্রায় ২৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে, এবং ২০২৫-২৬ অর্থ-বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরিত হবে।

এই আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মো. সহিদুল ইসলাম, সাবেক সদস্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, জনাব রোকসানা খান ,যুগ্মসচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ,অর্থ মন্ত্রণালয়, ডাঃ মোঃ শিব্বির আহমেদ ওসমানী ,যুগ্ম সচিব (জনস্বাস্থ্য অধিশাখা) ,স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনাব মোঃ মহসীন ,যুগ্মসচিব (মহাপরিচালক, অটিজম সেল),স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ, নির্বাহী পরিচালক, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, চেয়ার, গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিন অ্যান্ড ইনিসিয়েটিভ (গ্যাভী), সিএসও স্টিয়ারিং কমিটি, অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, সভাপতি।

ডাঃ মোঃ শিব্বির আহমেদ ওসমানী ,যুগ্ম সচিব (জনস্বাস্থ্য অধিশাখা) ,স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বলেন, তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাস করতে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ ও তা নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করতে হবে; সিগারেটের মূল্য স্তরগুলোর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমে সিগারেট ব্যবহারকারীর মূল্য স্তর পরিবর্তন করে কম মূল্য স্তরের সিগারেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করতে হবে; পর্যায়ক্রমে একক মূল্যস্তর পদ্ধতির প্রচলন করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য (এনবিআর), ড. মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। তবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য এবং তামাককর কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ। এতে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা যাচ্ছেনা। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এসময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব, রোকসানা খান বলেন, মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সব ধরনের সিগারেটের দাম বৃদ্ধি, নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক খুচরা মূল্যের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ করা এবং সিগারেটে বহুস্তর বিশিষ্ট আ্যডভ্যালোরেম কর পদ্ধতির পরিবর্তে ইউনিফর্ম স্পেসিফিক বা মিক্সড (স্পেসিফিক ও আ্যডভ্যালোরেম) কর পদ্ধতি প্রচলনের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ, নির্বাহী পরিচালক, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, চেয়ার, গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিন অ্যান্ড ইনিসিয়েটিভ (গ্যাভী), সিএসও স্টিয়ারিং কমিটি, তিনি বলেন, সুস্থ-সমৃদ্ধ দেশের জন্য ধূমপানমুক্ত সমাজ দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, তামাক সেবনের ফলে প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায় ৭১ লক্ষ মানুষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায় প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ। অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৩-১৫ বছরের শিশুদের মধ্যে (গ্লোবাল ইয়ুথ ট্যোবাকো সার্ভে-২০১৩) শতকরা ৬.৯% কোন না কোন ধরনের তামাক ব্যাবহার করে, তাদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা শতকরা ৯.২% এবং মেয়েদের সংখ্যা শতকরা ২.৮%। আমাদের লক্ষ্যে হতে হবে এই শতকরার পরিমান শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। তামাকপণ্যের অতিরিক্ত কর বাড়িয়ে এই লক্ষ্যে আমরা অচিরেই পৌছাতে পারি। তাই আমি বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের উপর অতিরিক্ত কর বর্ধিত করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য।

অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক,পরিচালক, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বলেন, তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ধরনের ক্যান্সার হবার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেড়ে যায়। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প নেই।

একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি, সুশান্ত সিনহা বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও করহার বৃদ্ধি করে এটিকে মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে নেওয়া তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও কিশোর-তরুণদের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। উচ্চ মূল্য কিশোর-তরুণদের তামাক ব্যবহার থেকে বিরত রাখবে। গবেষণায় দেখা যায় ১০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশে এর ব্যবহার কমবে ৭.১ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, একক শলাকার মূল্যে খুচরা পয়সা থাকলে বিক্রেতারা খুচরা অংশটুকু বাড়িয়ে নিয়ে পূর্ণ টাকায় বিক্রি করে। এতে তামাক ব্যবহারকারীরা বেশি দামে কিনলেও, বর্ধিত মূল্য থেকে সরকার কোন রাজস্ব পায় না কিন্তু ব্যবসায়ীদের মুনাফা বৃদ্ধি পায়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ডাঃ ইফতেখার মুহসিন প্রোজেক্ট কো-অরডিনেটর, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং গণমাধ্যমকর্মী।

টিএ/

দেখুন: পিএসএলের ফাইনালে সিগারেট টেনে ভাইরাল ইমাদ ওয়াসিম

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন