কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে পুরোনো চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। চামড়া সিন্ডিকেট কৌশলে দরপতন ঘটিয়ে কোরবানির চামড়ার বাজার ধ্বংস করছে। এতে করে গরিব-অসহায় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রাজধানীতে লবণ ছাড়া বড় এবং মাঝারি আকারের গরুর কাঁচা চামড়া ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর যেসব গরুর চামড়া আকারে তুলনামূলক ছোট এবং মান কিছুটা খারাপ, সেগুলোর দাম ছিল ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ঢাকার বাইরের বাজারে চামড়ার দাম আরও কম।
লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গতবারের চেয়ে এবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় নির্ধারিত দামের অর্ধেক মূল্যে কেনাবেচা হয়েছে গরুর চামড়া।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রির টাকা সাধারণত গরিব, অসহায় ও মিসকিনদের সাহায্য করার জন্য দেওয়া হয়। চামড়ার দাম যত কম হয়, ততই এ টাকা থেকে গরিবদের সাহায্য কম পৌঁছায় এবং তারা বঞ্চিত হয়।

চামড়ার আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদে ৮০-৮৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ট্যানারিগুলোর পক্ষ থেকে। ঈদের দিন কাঁচা চামড়া আসার হারও সন্তোষজনক। এ ছাড়া চামড়ার বাজারও এবার তুলনামূলক ভালো। বিগত কয়েক বছরের মতো এবার চামড়ার মূল্য না পেয়ে নষ্ট করেননি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। গতবারের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া কিছুটা বেশি দরে কিনছেন বলেও দাবি করেন আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা।
যদিও গত কয়েক বছরের মতো এবারও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়া বিক্রি করে তারা ন্যায্য মূল্য পাননি। তাদের কেউ কেউ বলছেন, এবারের দাম গত বছরের চেয়েও কম ছিল।
সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে এক বিক্রেতা বলেন, কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম কমলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে। এবার কোরবানির চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে এক-দুইশ টাকা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত মূল্যের চেয়ে অনেক কম।
কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ী আড়তদার আবেদ বেপারী জানান, একটা চামড়া ৭০০-৮০০ টাকায় কিনলে এর পেছনে আবার ৩০০-৪০০ টাকা খরচ আছে। লবণ দিতে হবে, কেমিক্যাল খরচ, লেবারের মজুরি, গোডাউন ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ বেড়েছে। এগুলো হিসাবনিকাশ করেই চামড়া কিনতে হয়। এটা তো আমাদের আবার বিক্রি করতে হবে।
এদিকে রাজধানী বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির গরুর চামড়া বিক্রি হলেও ছাগলের চামড়া নিয়ে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে চামড়া দিয়ে দিয়েছেন কোরবানিদাতারা। দুই-একজন বিক্রি করতে পারলেও ২০-৫০ টাকার বেশি দাম পাননি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, দেশে ইসলামী অনুশাসনের অভাবেই আজও অনেক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কোরবানির সময় বহু মানুষ লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে কোরবানিতে অংশ নিতে পারে না। অথচ কোরবানির চামড়া বিক্রি করে দেশের অনেক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায়। সেই চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।
চামড়ার বাজার ঠিক রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সারা দেশে বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ বিতরণ করছে, যাতে এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলো কোরবানির চামড়ার উপযুক্ত মূল্য পায়। এ ছাড়া সরকার কাঁচা ও ‘ওয়েট ব্লু’ চামড়া রপ্তানির সুযোগও দিয়েছে সরকার।
এবার লবণ মেশানো গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ৫ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ঢাকায় ট্যানারি ব্যবসায়ীদের লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কিনতে হবে, যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, যেখানে গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
ঈদের দিন থেকে টানা ১০ দিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া ঢাকায় আনা নিষিদ্ধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
পড়ুন : সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনছেন না ব্যবসায়ীরা, হতাশ সাধারণ মানুষ