নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভায় টিআর-কাবিখার ছোঁয়ায় অবকাঠামোগত উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে শহরের রূপ। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে পৌঁর এলাকার বিদ্যমান চেহারা। পৌর এলাকার ১৫টি ওয়ার্ডে একযোগে বাস্তবায়ন হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আওতাভুক্ত ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯১৭ টাকা।
পৌরসভার সূত্রে জানা গেছে, চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, ঘর সংস্কার, ড্রেন নির্মাণ ও স্লাব বসানো, গ্যারেজের ফ্লোর ঢালাই, বাজারের ছাউনির টিন পরিবর্তন, পুকুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, গলি রাস্তার সিসি করণ, ডাস্টবিন নির্মাণ, ড্রেন ও আবর্জনা পরিষ্কার, পানির লাইন সংস্কার, রাস্তা উঁচু ও সলিংকরণ, কবরস্থান সংস্কার, ক্লাবঘরের অবকাঠামো উন্নয়ন।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরাতন মাছ ও খাসির মাংসের বাজারের পুরনো ও ছিদ্রযুক্ত ছাউনির টিন বদলে নতুন টিন বসানো হয়েছে। ফলে বর্ষায় যেসব ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা দুর্ভোগে পড়তেন, তারা এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। একজন মাছ ব্যবসায়ী জানান, “আগে বর্ষায় টিন দিয়ে পানি পড়ায় দোকানে দাঁড়ানোই কঠিন ছিল। এখন নতুন ছাউনি দিয়ে অনেক সুবিধা হয়েছে।” পানবাজারে ৮০ মিটার নতুন ড্রেন নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতা অনেকটাই কমেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পানি ট্যাংকি সংলগ্ন এলাকায় বর্ষায় হাঁটু পানি জমত। এখন ড্রেন ও রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছি। এপথে চলাচলকারীরা দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ মুক্ত হয়েছে।
১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুলিশ লাইন এলাকার সুলতানা নামে এক গৃহবধু বলেন, এই রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখন ইটের সলিং হওয়ায় স্কুলের বাচ্চারাও নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “রাস্তা, ড্রেন, বাজার, ক্লাবঘরের উন্নয়ন আমাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ দূর করেছে। পৌর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ আগে মাছ বাছার ও খাসির মাংসের দোকানে যাওয়া দুষ্কর ছিল। গেলে কাদাপানি মেখে একাকার হয়ে যেতো। এখন সেখানে সংস্কার করায় আরামদায়ক পরিবেশ তৈরী হয়েছে। স্বস্তির সাথে কেনাকাটা করা যাচ্ছে।
পৌর কমিউনিটি সেন্টারে সিসি টিভি স্থাপন ও টাইলস করায় এইখানে প্রোগ্রাম করার ক্ষেত্রে সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মানুষ যে কোন অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে এই সেন্টারকে বেছে নেয়ায় পৌরসভার আয় বেড়েছে। যা জনসেবামুলক কাজে লাগানো হচ্ছে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক নুর-ই আলম সিদ্দিকী জানান, “১৫ টি ওয়ার্ডে টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ২৯টি উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এগুলোর বাস্তবায়ন হলে শহরের চেহারা পাল্টে যাবে এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সব কাজ পৌরসভার কঠোর তদারকির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাশয় পরিষ্কার, বাজারের ছাউনি ও ক্লাবঘরের অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। পৌরবাসীর সহযোগিতা থাকলে আরও সুন্দর ও আধুনিক সৈয়দপুর গড়ে তোলা সম্ভব।
গ্রামবাংলার অবকাঠামো উন্নয়নে আধুনিকায়নের ধারায় সৈয়দপুর পৌর এলাকার মহল্লাগুলোতে দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। রাস্তা-ঘাট, বাজার, ক্লাবঘর, ড্রেন সবখানেই টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের ছোঁয়া লেগেছে। এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কৃষি, ব্যবসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এমন উন্নয়ন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সৈয়দপুর উপজেলা আমীর হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম বলেন, বিগত ১৫ বছর আওয়ামীলীগ সরকার যেমন সারাদেশে সমভাবে উন্নয়ন করেনি। তেমনি গত ৪ বছর শেখ হাসিনা মনোনিত সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবী ন্যুনতম উন্নয়ন কাজ করেনি। বরং এই সময়ে প্রথম শ্রেনীর পৌরসভার অবস্থা দাড়িয়েছে অজপাড়াগায়ের পর্যায়ে। শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ রাস্তা চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছিল।
এমতাব্স্থায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পৌর পরিষদ বাতিল পূর্বক সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়ার পর তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। যা স্বল্প সময়েই সৈয়দপুরের উন্নয়নে ব্যাপক কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে আরও পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। যা সৈয়দপুরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল। আশা করি পৌর প্রশাসক আরও দায়িত্বশীলতার সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করলে প্রয়োজনীয় সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
পড়ুন: আকাশে আজব আলোর সরল রেখা |
দেখুন: সৈয়দপুরে এক টাকায় ঈদের নতুন জামা (১ টাকায় রঙীন জামা পেলো শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশু)
ইম