স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সব নাগরিকের, কোনো দলের নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়, কোনো সম্প্রদায়ের নয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ প্রজাতন্ত্রের স্বাধীন কর্মচারী, যারা সুনির্দিষ্ট আইন মেনে চলেন এবং রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করবেন। তিনি নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, তারা কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন কিংবা তাদের অন্যায় নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে অপেশাদার আচরণ ও বেআইনি কাজ করবেন না।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহী জেলার সারদা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সহকারী পুলিশ সুপারদের (শিক্ষানবিস) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে। প্রশিক্ষণের সমাপনী কুচকাওয়াজে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের ৩ জন এবং ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের ৫৭ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে এখন সুপ্রশিক্ষিত পুলিশ অফিসার হিসেবে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,
“আজ থেকে আপনারা সুপ্রশিক্ষিত এক ঝাঁক মেধাবী, চৌকস পুলিশ অফিসার হয়ে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়, নাগরিকের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে যাচ্ছেন।” তিনি নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কর্তব্য পালনের জন্য বলেন। তিনি বিশেষভাবে পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেন যাতে থানায় এসে কেউ হয়রানির শিকার না হয়।
তিনি আরও বলেন, “জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে, সেই চেতনাকে ধারণ করে পুলিশ বাহিনীর গৌরব আরও সমুন্নত রাখতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী ও জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল রাখতে হবে।”
অভিনন্দন ও শুভেচ্ছার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা আজকের শপথে বলীয়ান হয়ে জনগণের সেবা করবেন। নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে সচেতন থাকুন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মেধা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করুন।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইজিপি বাহারুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল (অ্যাডিশনাল আইজিপি) মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে মঞ্চে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া সেনানিবাসের ১১ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল এস এম আসাদুল হক, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাওয়াদুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ এবং আরও অনেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা।

এ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের এক বছরব্যাপী কঠোর মৌলিক প্রশিক্ষণের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। প্রশিক্ষণটি শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর, এবং শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে প্রশিক্ষণার্থীরা কঠোর পরিশ্রম ও উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ পুলিশ অফিসার হিসেবে প্রস্তুত হয়েছেন।
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী পুলিশ বাহিনীর গৌরব ও কর্তব্যের প্রতি নিবেদিত থাকার আহ্বান জানান। তিনি জানান, পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে এবং দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে।
পড়ুন:চলন্ত বাসে ডাকাতির সময় কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি : টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার
দেখুন :অনুমতি ছাড়া দাড়ি রাখতে পারবে না পুলিশ | B
ইম/