স্বাগত ২০২৫, বিদায় ২০২৪
সুইডিশ ভাষায় ‘ফেস্ট’ শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘পার্টি’, আর বাংলা ভাষায় ‘পার্টি’ শব্দটি বেশ পরিচিত। ইউরোপের পার্টি, বিশেষ করে সুইডিশ পার্টির ওপর কিছু তথ্য আজ তুলে ধরব। জানুয়ারি মাস বছরের প্রথম মাস।
সব কিছুতে নতুনত্বের অনুভূতি থাকে, যার কারণে মাসটি দ্রুত চলে যায়। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে, সুইডেনে ‘স্পোর্টলোভ’ বা শীতকালীন ছুটি উদযাপিত হয় এক সপ্তাহ ধরে।
এ সময় স্কুল বন্ধ থাকে এবং ছোট-বড় সবাই তুষারে স্কিইং থেকে শুরু করে স্কেটিং পর্যন্ত বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিতে অংশ নেয়। এই অ্যাকটিভিটিগুলো বেশিরভাগই পার্টির মধ্যে পড়ে, যেমন একসঙ্গে স্কী করা, সাওনাতে গরম এবং ঠান্ডা পরিবেশে গোসল করা, তুষারের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করা, একসঙ্গে ডিনার করা—এগুলো ছোট-বড় সবার জন্য একটি আনন্দময় বিশেষ সময় হয়ে থাকে। মার্চ মাসে সাধারণত তেমন কোনো উৎসব হয় না, তবে এপ্রিলে যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান তথা অলৌকিক ঘটনাটিকে স্মরণ করার জন্য ইস্টার উৎসব উদযাপিত হয়। এটি খ্রিষ্টীয় বর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি পুরাতন জীবন অবসানের পর নতুন জীবন শুরুর প্রতীক। এ সময় স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। অনেকেই এই ছুটিতে সুইডেন বা ইউরোপের বাইরে গরমের দেশে সময় কাটাতে পছন্দ করে। এপ্রিলের শেষের দিন বা মে মাসের প্রথম দিনে ‘Valborgsmässoafton’ পালিত হয়। শীত বিদায় দিতে জঙ্গলের কাঠ জমা করে আগুন জ্বালানো হয়, আর সঙ্গে থাকে নাচগান ও হৈহুল্লোড়। সুইডিশ জাতি দিনটি পালন করে আনন্দের সাথে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠান বা পার্টি হয় এবং ডরমিটরির ফেস্ট বা ডরমিটরি পার্টি শিক্ষার্থীদের জন্য মজাদার সময় হয়ে থাকে। জুন মাসে সুইডেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্টি হলো মিডসামার পার্টি। এই সময় সুইডিশরা বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন, বাড়িতে ফিরে আসে। সবাই মিলে আনন্দ-ফুর্তি, নাচ-গান, ভালো খাবার, প্রচুর ড্রিঙ্কসহ দিনটি উদযাপন করে। এটি একটি ব্যতিক্রমী ট্র্যাডিশন বলা যেতে পারে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে তারা ‘হোস্ট পার্টি’ বা ‘অক্টোবর পার্টি’ পালন করে। জার্মানিতে প্রতি সপ্তাহে বিশাল পার্টি হয়, যা দেখতে এবং এতে যোগ দিতে পৃথিবীর নানা দেশের লোকজন ভিড় করে।
সুইডেনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় পার্টি হয় ১০ ডিসেম্বর, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে। যদিও এটি একটি মৃত্যুবার্ষিকী, তবে দিনটি পালিত হয় আনন্দ-ফুর্তির মধ্য দিয়ে। কারণ, সারা পৃথিবী থেকে সেরা ব্যক্তিরা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোবেল পুরস্কারের জন্য সম্মানিত করা হয়। নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডিসেম্বর মাসেই খ্রিষ্টানদের বড়দিন উদযাপিত হয় এবং সুইডেনে বড়দিন পালনের সময়টি বেশ আনন্দময়।
বড়দিন পালনের পরপরই শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতি। নববর্ষ উদযাপন বা দিনটিকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনকে বরণ করার জন্য নানা অনুষ্ঠান হয়। দিনের শেষে সুইডেনের শীতের দেশে, ঘরে-বাইরে সবাই অপেক্ষায় থাকে— কখন ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা বাজবে, কখন ঘণ্টা বাজবে, আর কখন শ্যাম্পেনের বোতল খুলে নববর্ষ দিবসে চিয়ার্স বলতে হবে, সেই প্রতীক্ষায় আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা। হঠাৎ যখন সেই মুহূর্তটি এসে পৌঁছাবে, তখন ডিস্কোটেকের বিখ্যাত আব্বা গান বাজতে শুরু করবে, আর বন্ধু তার বান্ধবী, প্রিয় তার প্রিয়াকে, স্বামী তার স্ত্রীর গা জড়িয়ে ধরবে এবং গাইতে শুরু করবে—
‘No more champagne / Here we are, me and you / Feeling lost and feeling blue / It’s the end of the party / And the morning seems so grey / So unlike yesterday / Now’s the time for us to say — Happy New Year’।