39.8 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৫

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ১৬ গ্রামে

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি প্রত্যান্ত দুর্গম এলাকার ১৬টি গ্রামে। ফলে প্রান্তিক এই গ্রামগুলোতে বিভিন্ন আর্থসামাজিক,সুযোগ সুবিধা ,শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় পিছিয়ে রয়েছে প্রায় দশ হাজার মানুষ। ওই এলাকায় মুল সড়কটি কোনভাবে পেলেও প্রতিটি গ্রামগুলোতে এখনো উন্নয়নের বাহিরে রয়ে গেছে। যার কারণে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, রোগীসহ এখানকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বঞ্চিত হচ্ছে কৃষিপণ্যের নায্যমুল্য দাম থেকেও। বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এমন চিত্র দেখা মিলেছে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের ৩ হতে ৬ নং ওয়ার্ডের।

রোয়ংছড়ি সদর হতে লুলাই বম পাড়া পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়কের ঘেষে ১৬টি গ্রাম রয়েছে। ব্যঙছড়ি বড় পাড়া, অংজাই পাড়া, ব্যঙছড়ি নতুন, ব্যঙছড়ি বাজার, ব্যঙছড়ি ত্রিপুরা, ব্যঙছড়ি মুনয়ার বম, ব্যঙছড়ি খাবেহ, ব্যঙছড়ি রেদো, ব্যঙছড়ি পূর্ণবাসন, সিমন, রায়চন্দ্র ত্রিপুরা,শুকনা ঝিড়ি,কয়াল বম,সঙ্খমনি,তারাছা ত্রিপুড়া ও সর্বশেষ দুর্গম এলাকায় গ্রামের অবস্থান লুলাইং বম পাড়া। এই ১৬টি গ্রামের জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০ হাজার অধিক মানুষের বসবাস। প্রতিটি গ্রামের বয়স প্রায় ৫০০ বছরে অধিক। কিন্তু সেসব গ্রামের এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। হারিকেন কিংবা সোলারে আলোতে জীবিনযাপনে ঘাটতি টানছে ওই গ্রামের মানুষজন।

এলাকাবাসীরা জানিয়েছে, দুর্গম এই প্রত্যান্ত ১৬টি গ্রামগুলোতে মারমা, ত্রিপুরা, বম ও তংচঙ্গ্যা এই চার সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে আসছে। এলাকায় জুড়ে রয়েছে ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১টি গীর্জা ও বৌদ্ধ উপসানালয় রয়েছে ৬টি। তাদের প্রধান জীবিকা নির্বাহ বলতে বাঁশ, গাছ ও জুম বাগানের উপর নির্ভরশীল। এসব উপর নির্ভর করে চলে তাদের সংসার। সেসব ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এখনো আলোর মখ দেখেনি এলাকাবাসীসহ ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। স্বাধীনতা পর থেকে নানা বঞ্চিত অবহেলায় পড়ে রয়েছে গ্রামগুলো। জনপ্রতিনিধিরা একের পর এক আশ্বাস দিয়ে গেলেও নির্বাচিত হওয়ার পর ফিরেও তাকায়নি সেসব গ্রামে। নানা প্রতিকূলতার কারণে এলাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে স্কুলবিমুখ শিক্ষার্থীর সংখ্যা। সেই সাথে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ। স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রেও তাদের জন্য নেই সরকারি তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলা সদর থেকে ৩১ কিলোমিটার দূরে লুংলাই বম পাড়া পর্যন্ত এই পাহাড়ি জনপদে পাঁচশত বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে মারমা, ত্রিপুরা, তংচঙ্গ্যা ও বম সম্প্রদায়ের দশ হাজারের অধিক মানুষ। এই জনগোষ্ঠীর অভাব-অনটন ও কাজের সন্ধানে শহরমূখী হওয়ায় তাদের অধিকাংশ শিশু এখন স্কুল বিমুখ। তাই এখনও অন্ধকারে পাশাপাশি আর্থ সামাজিক, সুযোগ-সুবিধা ও স্বাস্থ্য চিকিসা থেকে বঞ্চিত রয়েছে চার সম্প্রদায়ের মানুষ। চিকিৎসা সেবায় কোনো কার্যক্রম না থাকায় স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা-ঘাটের কোনো কাজ না করায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামের মানুষদের।

ব্যাঙছড়ি বড় পাড়া গ্রামপ্রধান (কারবারী) উথোয়াই প্রু মারমা বলেন, স্বাধীনতা পর থেকে কোন এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি। এখনো পর্যন্ত কোন গ্রামে বিদ্যু পৌছাতে পারেনি’ শুধু সোলার আর হারিকেনে আলোতে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এতে এলাকার মানুষদের মাঝে নানা দূর্ভোগ দেখা দেয়।

ওই এলাকার বাসিন্দা উবামং ও নুথোয়াই মারমা বলেন, গ্রামে গুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপসানালয় রয়েছে কিন্তু এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এলাকাবাসীরা আর্থ সামাজিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত। তারা চান এই সরকারে আমলে এলাকার মাঝে উন্নয়ন ছোঁয়া বয়ে আনুক।

১নং সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা বলেন, ব্যাঙছড়ি এলাকা জুড়ে স্কুল, কমিনিউটি সেন্টার ও প্রতিটি ঘরে সোলার প্যানেল দেয়া হয়েছে। সড়ক নির্মাণে জন্য বিভিন্ন স্থানে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর সরকার পরিবর্তন হওয়াই সেসব উন্নয়ন কাজ ধমকে আছে। আশা করছি দ্রুত উন্নয়ন ছোঁয়া বইবে।

জেলা পরিষদের সদস্য নাংফ্রাং খুমী বলেন, আমি ব্যাঙছড়ি ওদিকে কোনদিন যায়নি। এলাকাবাসীরা দরখাস্ত না দিলে কি করব। তবুও দেখি কাল পরশু পরিদর্শনে যেতে পারি কীনা।

পড়ুন : বান্দরবান প্রেসক্লাবকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের ৩০ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন