27 C
Dhaka
রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ৪.৫২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পাকিস্তান থেকে ফেরত আনার উদ্যোগ

স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানে জমা থাকা বাংলাদেশি সম্পদ ফেরত আনতে আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ১৯৭১ সালের আগে অবিভক্ত পাকিস্তানে অবস্থান করা প্রায় ৪.৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ ফেরতের দাবি এবার কূটনৈতিকভাবে উত্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই বিষয়ে আলোচনা হবে আগামী ১৭ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে। উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে গত ১৫ বছরে এই প্রথম এমন উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দাবিকৃত অর্থের মধ্যে রয়েছে সরকারি তহবিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড, সঞ্চয়পত্র, বৈদেশিক সাহায্যসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সম্পদ। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো ১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পাঠানো ২০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক সাহায্য, যা প্রথমে ঢাকার স্টেট ব্যাংকে জমা থাকলেও পরে লাহোরে স্থানান্তর করা হয়। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে কর্মরত বহু বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তা দেশে ফিরে এলেও তাদের সঞ্চিত প্রভিডেন্ট ফান্ড ফেরত দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি সুসংহত দাবিপত্র প্রস্তুত করেছে, যেখানে বকেয়া অর্থের উৎস ও পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের ২৭ মার্চ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ বিভাগের সচিবকে একটি চিঠির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দ্রুত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।

২০১০ সালে সর্বশেষ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ঢাকা একই দাবি তোলে। সেই সময়ও বাংলাদেশ অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদ থেকে ন্যায্য হিস্যার দাবি তোলে এবং পাকিস্তান সরকারের কাছে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের দাবি জানায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথি অনুযায়ী, জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ অবিভক্ত পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ সম্পদের অধিকারী ছিল। বিদেশি মুদ্রা অর্জনে অবদান বিবেচনায় এ হার দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশ। সমতা ভিত্তিক হিসাবেও অন্তত ৫০ শতাংশ দাবি করার অধিকার রাখে বাংলাদেশ।

পরিকল্পনা কমিশনের এক হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি কর্মচারীদের ৯০ লাখ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ড, রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখায় ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, এবং পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও বন্ড থেকে পাওনাসহ মোট ৮৭০.৫৮ কোটি রুপির হিস্যা রয়েছে, যার অর্ধেকের দাবি বাংলাদেশ করতে পারে।

বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের ইস্যুকৃত ২১.৩৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও বন্ড এর দায়ভার বহন করেছে, যার ওপর ভিত্তি করে আরও অর্থ দাবি করা হচ্ছে।

এই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক দাবিটি কেবল কূটনৈতিক আলোচনার বিষয় নয়, বরং ইতিহাস ও ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা এসব সম্পদের বৈধ হিস্যা ফেরত পেতে বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরও উচ্চপর্যায়ের আলোচনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

পড়ুন: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কামনায় মোনাজাতে কাঁদলেন লাখো মানুষ

দেখুন: স্বাধীনতা দিবস পালনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ 

ইম/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন