17 C
Dhaka
শনিবার, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪

হতে চলেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট, কে এই জেডি ভ্যান্স?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার বিজয়ী হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে ট্রাম্পের ‘রানিং মেট’ হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ভোটের ময়দানে লড়েছেন জেডি ভ্যান্স।

ট্রাম্প জয় পাওয়ায় এবার তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে তিনি এককালে ছিলেন ট্রাম্পের ‘কড়া সমালোচক’। সেখান থেকে তিনি পরবর্তীতে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তবে কে এই জেডি ভ্যান্স? ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে তার রানিং মেট হয়ে ওঠার সফর বেশ আকর্ষণীয়। এই প্রতিবেদনে জেডি ভ্যান্সের সেই আকর্ষণীয় সফরের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরা হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন

জেডি ভ্যান্সের জন্ম ওহাইয়োর মিডলটাউনে। তার নাম ছিল জেমস ডোনাল্ড বোম্যান। তার বাবা যে সময় বাড়ি ছেড়েছিলেন, সে সময় জেডি ভ্যান্সের বয়স খুবই কম ছিলো আর তার মা লড়াই করছিলেন মাদকাসক্তির সঙ্গে। এই কঠিন পরিস্থিতির কারণে প্রায়শই তিনি নানা-নানির বাড়িতে আশ্রয় নিতেন। পরে জেডি ভ্যান্সকে তার নানা-নানি দত্তক নেন। বর্তমানে তাদের পদবিটাই ব্যবহার করেন ভ্যান্স।

জেডি ভ্যান্স মিডলটন হাইস্কুল থেকে পাস করার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পসে যোগ দেন। পরে ইরাকে মোতায়েন করা হয় তাকে। এরপর ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইয়েল ল স্কুল থেকে তিনি পড়াশোনা করেন।

পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ায় বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ভ্যান্সের স্ত্রী ঊষা চিলুকুরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বিয়ে করেন এই যুগল। বর্তমানে এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে– ইভান, বিবেক ও মিরাবেল।

লেখক হিসাবে খ্যাতি

‘হিলবিলি এলেজি’ নামক স্মৃতিকথার জেডি ভ্যান্সের লেখা যা তাকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলে। এই বইটি রয়েছে সর্বাধিক বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায়ও যেটা নিয়ে সিনেমাও তৈরি হয়েছে। নেটফ্লিক্সে দেখা যেতে পারে এই সিনেমা।

ভ্যান্সের লেখনীতে উঠে এসেছে অ্যাপেলেচিয়া অঞ্চলের কথা যেখানে তার বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। ‘হিলবিলি এলেজি’-তে ভ্যান্সের বেড়ে ওঠা, তার চারপাশের পরিস্থিতি, বন্ধু ও পরিজনদের ভুল সিদ্ধান্ত আর অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতার কথা ফুটে উঠেছে। রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে তার পরিচিত মানুষেরা পরিশ্রম করার বদলে সরকারি অনুদানের ওপর নির্ভর করতেন।

এই বই লেখার পর ভ্যান্স লেখক হিসাবে বিখ্যাত হওয়ার পাশাপাশি, ভাষ্যকার হিসাবেও বেশ পরিচিতি লাভ করে। বিভিন্ন নামকরা অনুষ্ঠানে ভাষ্যকার হিসাবে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হতো। যেখানে তিনি তৎকালীন রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী ট্রাম্পের সমালোচনা প্রায় সময়ই করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই নির্বাচন সত্যিই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, বিশেষত শ্বেতাঙ্গ শ্রমিক শ্রেণির ওপর। এটা (তৎকালীন নির্বাচন) মানুষকে অন্যদের দিকে আঙুল তোলার অজুহাত দিচ্ছে, তা সে মেক্সিকান অভিবাসী হোক, চীনা বাণিজ্য বা অভিজাত ডেমোক্র্যাট হোক বা অন্যরা।’

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে রাজনীতি

২০১৭ সালে জেডি ভ্যান্স ওহাইয়োতে ফিরে আসেন এবং আর্থিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন তিনি। রাজনীতিতে তার প্রবেশকে কেন্দ্র করে অনেকদিন থেকেই গুঞ্জন চলছিল। এই গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হয় ২০২২ সালে যখন ওহাইয়োর রিপাবলিকান সেনেটর রব পোর্টম্যান পুনর্নির্বাচনের জন্য প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রথমদিকে ভ্যান্সের রাজনৈতিক প্রচার বেশ ধীর গতিতে চলছিল। তার প্রাক্তন বস পিটার থিয়েল তাকে এক কোটি ডলার দিয়ে সাহায্য করলে নির্বাচনি প্রচারে গতি আসে। ক্রমশ ভ্যান্সের আলোচনার ফোকাস অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে থাকে।

ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে থাকা টেক্সট বার্তা অনুসারে, ২০২০ সালের শেষের দিক পর্যন্ত ট্রাম্পের বিষয়ে সংশয় ছিল ভ্যান্সের। চার বছর আগে তিনি লিখেছিলেন, প্রেসিডেন্ট “তার অর্থনৈতিক জনপ্রিয়তা (একটা বিচ্ছিন্ন চীন সম্পর্কিত নীতি ছাড়া) বাস্তবায়িত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন” এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদ হারাবেন।

তবে সিনেটের জন্য প্রচারের সময় তার আগের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন ভ্যান্স। এইভাবে তিনি ট্রাম্পের এবং ক্রমশ রিপাবলিকানদের সমর্থন পেতে সক্ষম হন যা তাকে সিনেটে যেতে সাহায্য করে।

একইসঙ্গে তিনি ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ রাজনীতির একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন – এবং প্রায় সম্পূর্ণভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে তাকে সহমত পোষণ করতেও দেখা যায়। জেডি ভ্যান্সের বেড়ে ওঠা এবং তার ব্যক্তিত্ব শ্রমজীবী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারে ভেবেই তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত করেছিলেন বলে মনে করা হয়।

এনএ/

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

বিশেষ প্রতিবেদন