বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নতুন করে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। মঙ্গলবার (১৩ মে) দেশটির স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, হার্ভার্ডের ৪৫ কোটি ডলারের অনুদান বাতিল করা হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহেই আরও ২২০ কোটি ডলারের অনুদান কাটা হয়েছিল। সরকার বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি “গভীর বৈষম্যমূলক সমস্যায়” জর্জরিত।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ এবং বৈচিত্র্যভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। হোয়াইট হাউসের ‘অ্যান্টি-সেমিটিজম টাস্কফোর্স’ এক বিবৃতিতে হার্ভার্ডকে তীব্রভাবে সমালোচনা করে বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি “নৈতিকতার বাহাদুরি এবং বৈষম্যের উর্বর জমি” হয়ে উঠেছে। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্তেই উঠে এসেছে যে ইহুদি শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অপমান, হুমকি এবং ভীতির শিকার হচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার সোমবার মার্কিন শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহনের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন, “আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে।” তিনি জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলার পর ক্যাম্পাসে সংকট দেখা দেয় এবং সেই সময় থেকেই সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গারবার আরও বলেন, “গত শিক্ষাবর্ষের চ্যালেঞ্জ আমাদের দেখিয়েছে—ক্যাম্পাস থেকে ইহুদিবিদ্বেষ এবং ঘৃণার অন্যান্য রূপ দূর করতে কীভাবে সংস্কার আনা যায়।” তবে এসব সংস্কার সত্ত্বেও হার্ভার্ড সরকারের অনুদান কাটছাঁট ঠেকাতে পারেনি। মঙ্গলবার এক মামলার নথিতে প্রকাশ পায়, মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটস’ তহবিল বন্ধের চিঠি পাঠানো হয়, যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়—এই ক্ষেত্রে “কোনো সংশোধনের সুযোগ নেই।”
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করেছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত নয় এবং শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে যোগ্যতা ও ব্যক্তিগত গুণাবলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, বর্ণ বা জাতিসত্তাকে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, তা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ঘিরে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই সংঘাত কীভাবে সমাধান হবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।
পড়ুন: হার্ভার্ডের ২.২ বিলিয়ন ডলারের অনুদান স্থগিত করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প
দেখুন: দেশের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীদেরও হারিয়ে দিচ্ছে আল কাসাব!
ইম/