হাসিনা সরকারের মেয়াদকালে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা দিয়ে একাধিক পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প সম্পন্ন করা সম্ভব হতো বলে মনে করছেন দেশ বিদেশের মিডিয়াসহ বিশেষজ্ঞরা।
স্বাধীনতা উত্তর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। আর এই সময়ে ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে আদৌ কি পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত আনা সম্ভব?
দেশের ৭টি মেগা প্রকল্পের বড় বাজেট ধরা আছে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরে। এই প্রকল্পের বাজেট ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া পদ্মা সেতুর বাজেট কয়েক দফা বাড়িয়ে দাড়ায় ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্ন্তবর্তী সরকার সম্প্রতি এই বাজেট থেকে ১ হাজার ৮শত ৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। মেট্রোরেলের বাজেট ৫২ হাজার কোটি টাকা। পাতাল মেট্রোরেলের বাজেটও ৫২ হাজার কোটি টাকা। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের বাজেট ধরা আছে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাজেট ৯ হাজার কোটি টাকা। খুলনা-মোংলা রেলপথের বাজেট ৪ হাজার কোটি টাকা। এতোগুলো মেগা প্রকল্পের মোট বাজেট ২ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ কেবল পাচার হওয়া টাকা দিয়েই এমন ২১টি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করা যেতো।
যখন যে সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তারা তাদের আয়োজিত বিভিন্ন সভা, সেমিনারে নিজেদেরকে জনগণের রক্ষক বলে পরিচয় দিলেও, তাদের আশীর্বাদপুষ্টদের হাতেই লুট হয়েছে গণমানুষের ভাগ্য।
বাংলাদেশের জনগণ জানেন, কারা তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন, কাদের পকেট ভারী করতে গিয়ে ধ্বংস হয়েছে স্বাস্থ্য, শীল্প, শিক্ষা, বাণিজ্য খাত। অস্ত্রের ভয়ে যারা মুখ বন্ধ করে রেখেছিলেন এতোদিন, এখন তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। একের পর এক বের হয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে বেশি দর ও রপ্তানিতে কম দর দেখিয়ে অর্থ লোপাট করেছে হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী মাফিয়ারা। যতবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ততবারই হাসিনা সরকার দেশকে পরিণত করেছে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে।
আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক নেতা ও শেখ পরিবারের এমন কেউ নেই যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই।
লক্ষ, হাজার কোটি টাকা পাচার করে একদিকে দুর্নীতিবাজদের বিলাসি জীবন, অন্যদিকে দারিদ্রের কষাঘাতে পিষ্ট বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। নির্বাচিত, অনির্বাচিত সরকারের সকলেই দায়িত্বের আড়ালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্ষতি করেছে দেশের সাধারণ মানুষের।
অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর জনগণের বিভিন্ন দাবি দাওয়ার পাশাপাশি প্রকট হয়ে উঠছে অর্থনৈতিক সংকট। কোন তথ্য প্রমাণ না থাকলেও, অনেকেরই ধারণা, হাসিনা ও রেহানা পালিয়ে যাবার সময় তাদের কাছে থাকা স্যুটকেস ভর্তি ছিল ডলার।
দেশের এরকম পরিস্থিতিতে জনগণ সংঘবদ্ধ না থাকলে কখনোই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। দেশের জনগণের চাহিদাকে প্রাধান্য না দিলে দেশ আবারও শোসকদের ব্যবসাক্ষেত্রে পরিণত হবে বলেও আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।