যুক্তরাষ্ট্র ও হুতি গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। লোহিত সাগরে চলমান হামলা এবং পাল্টা হামলা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বিরোধ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ গত রোববার ঘোষণা করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যতক্ষণ পর্যন্ত হুতিরা তাদের জাহাজে হামলা বন্ধ করার ঘোষণা না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে, হুতিরা তাদের হামলা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে এবং জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা বন্ধ না হলে তারা পাল্টা হামলা অব্যাহত রাখবে।
শুক্রবার রাতে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইয়েমেনের বিভিন্ন নিশানায় হামলা শুরু করে। হামলার ফলস্বরূপ, ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচ শিশু এবং দুজন নারী রয়েছে। এ হামলায় আরও ৯৮ জন আহত হয়েছে, তবে এ বিষয়ে মার্কিন পেন্টাগন তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেনি। ইয়েমেনে বিরুদ্ধে এই হামলা ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে পরিচালিত সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান।

এই হামলার পর হুতি নেতা আব্দুল মালিক আল-হুতি রোববার এক টেলিভিশন বক্তৃতায় বলেন,
“যতদিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হামলা চালাবে, ততদিন আমরা লোহিত সাগরে তাদের জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাবো।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এই হামলাকে প্রতিরোধ করার কথা বলেছেন। অন্যদিকে, রাশিয়া ওয়াশিংটনকে হামলা বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছে, তাদের বিমান বাহিনী ১১টি ড্রোন গুলি করে নষ্ট করেছে এবং ইয়েমেন উপকূলে একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্ত করেছে, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো হুমকি ছিল না।হামলার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, যাতে লোহিত সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ফক্স নিউজের ‘সানডে মনিং ফিউচারসে’ বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের হামলা বন্ধ করার ঘোষণা না দেবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা অভিযান চালিয়ে যাবো।” তিনি আরও বলেন, “এই অভিযানটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ জলপথে আমাদের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।”
ইরান, যা দীর্ঘদিন ধরে হুতিদের সমর্থন দিয়ে আসছে, সেই দেশটিও এ ঘটনায় জড়িত রয়েছে। ইরান হুতিদের অস্ত্র সরবরাহ এবং রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। হুতি গোষ্ঠী গত কয়েক মাসে গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে লোহিত সাগরে ১০০-এরও বেশি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলাগুলোর প্রতিরোধে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, যাতে তারা আরেকটি ইরানী সমর্থিত হামলা ঠেকাতে পারে।
গত শনিবার, ট্রাম্প হুতিদের লোহিত সাগরে হামলা বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন যে, না হলে তিনি তাদের ‘নরক বৃষ্টি’ হুমকি দেবেন। ইরানকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, “ইরান যদি আমাদের হুমকি দেয়, তাহলে আমেরিকা তোমাকে সম্পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনবে।”
এদিকে, তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে এবং তাদের লোহিত সাগরে হামলা চালিয়ে যাওয়ার অধিকার রক্ষার কথা বলেছে। ইরান বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কমান্ডার হোসেইন সালামি যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জবাবে বলেছেন, “আমরা শত্রুদের সতর্ক করে বলতে চাই, তারা যদি তাদের হুমকি বাস্তবায়ন করে, আমরা দৃঢ়ভাবে তার ভয়াবহ জবাব দেব।”
এই পরিস্থিতিতে, মস্কোও ওয়াশিংটনকে হামলা বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান চলমান থাকবে যতদিন না হুতিরা তাদের হামলা বন্ধের ঘোষণা দেয়। এই দ্বন্দ্বের ফলে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
পড়ুন: লোহিত সাগরে জ্বালানিবাহী জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
দেখুন: ই/স/রা/ই/ল-আ/মে/রি/কা/র জন্য নতুন দুঃস্বপ্ন?
ইম/