ভারতে হোলি উৎসবের সময় কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উত্তর প্রদেশের সম্ভল এলাকায় ১০টি মসজিদকে ঢেকে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল, ১৪ মার্চ, শুক্রবার, ভারতে হোলি উৎসব উদযাপিত হবে, এবং এই দিনটি একইসঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম শুক্রবার বা জুমার নামাজের দিনও। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে উত্তর প্রদেশ প্রশাসন অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে।

প্রশাসন জানায়, সম্ভল এলাকার কিছু ঐতিহ্যবাহী রাস্তা দিয়ে হোলির শোভাযাত্রা বের হবে, এবং এসব রাস্তার পাশে ১০টি মসজিদ অবস্থিত।
এ কারণে, মসজিদগুলোকে প্লাস্টিক শিট এবং ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে শাহী জামা মসজিদ, লাদানিয়া ওয়ালী মসজিদ, থানে ওয়ালি মসজিদ, এক রাত মসজিদ, গুরুদোওয়ারা রোড মসজিদ, গোল মসজিদ, খেজুর ওয়ালি মসজিদ, আনার ওয়ালি মসজিদ এবং গোল দুকান ওয়ালি মসজিদ রয়েছে।
উত্তর প্রদেশ পুলিশের এসপি শ্রীশ চন্দ্র জানিয়েছেন, দুই সম্প্রদায়ের উৎসব যাতে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়, তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা শোভাযাত্রার ঐতিহ্যবাহী রুটে যেসব মসজিদ রয়েছে, সেগুলোকে ঢেকে দেবো, যাতে কোনো ধরনের উত্তেজনা বা অশান্তি না ঘটে।”
এ বছরের হোলি উৎসব এবং জুমার নামাজের দিন একসঙ্গে পড়া কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি সমঝোতা হয়েছে, যাতে এই দুটি ধর্মীয় কার্যক্রম একে অপরের সাথে সংঘর্ষে না পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবারের নামাজ শোভাযাত্রার আগে বা পরে অনুষ্ঠিত হবে এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। এছাড়া, পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা এড়ানো যায়।
প্রশাসন সতর্ক রয়েছে, কারণ গত বছরের নভেম্বরে জামা মসজিদের জরিপ নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং এতে ব্যাপক সহিংসতা ঘটে। এই সহিংসতায় পাঁচজন নিহত এবং ২০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য আহত হন। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে, এবারের উৎসব এবং জুমার নামাজের সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
এদিকে, সম্ভল থানায় একটি শান্তি সভা আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে দুই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রধানরা একত্রিত হয়ে হোলি এবং শুক্রবারের নামাজ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। তারা বলেন, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখতে এবং কোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে তাদের প্রস্তুতি রয়েছে।
এছাড়াও, সম্প্রতি, সম্ভল পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মুসলিমদের হোলির সময় ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই পরামর্শে তিনি বলেন, মুসলিমরা যদি রঙে না মাখতে চান, তবে তাদের ঘরে থাকা উচিত। এই মন্তব্যের সমর্থনে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও নিজের মতামত ব্যক্ত করেন।
সব মিলিয়ে, ভারতে হোলি উৎসবের সময় যাতে কোনো ধরনের অশান্তি বা সংঘর্ষ না হয়, সেজন্য প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছে।
পড়ুন : হোলি আর্টিজান হামলার ৮ বছর: বিচার শেষের অপেক্ষায় পরিবার
দেখুন : হোলি আর্টিজানে হামলা মামলা: ৭ জঙ্গির সাজা কমলো
ইম/