ভারতের প্রখ্যাত যোগগুরু ও পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত স্বামী শিবানন্দ আর নেই। শনিবার (৩ মে ২০২৫) তিনি ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১২৯ বছর। তার জন্ম ১৮৯৬ সালে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার হরিতলা গ্রামে।
রোববার (৪ মে) সকালে ভারতীয় সংবাদ চ্যানেল এবিপি আনন্দ তার মৃত্যুর খবর প্রচার করে।
শিবানন্দের শিষ্য সঞ্জয় সর্বজ্ঞের বরাতে এবিপি জানায়, সম্প্রতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেষ পর্যন্ত শনিবার রাত ৯টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। সোমবার তার শেষকৃত্য হওয়ার কথা। স্বামী শিবানন্দ দীর্ঘ জীবন ও সাদাসিধে জীবনযাপনের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট, যা তাঁর আধার কার্ডে উল্লেখ আছে। বিশ্বব্যাপী তিনি অতিবৃদ্ধ একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। স্বামী শিবানন্দ দীর্ঘদিন ধরে ভারত ও বিশ্বের নানা প্রান্তে যোগব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সাদাসিধে আহার, সংযমী জীবন ও নিয়মিত যোগচর্চা দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি। ২০২২ সালে, ১২৫ বছর বয়সে, তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহণ করেন। পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতির সামনে প্রণাম করেন, যা উপস্থিত সকলকে অভিভূত করে।
মনোরোগে পিএইচডি করা যোগী শিবানন্দ ১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট হবিগঞ্জের বাহুবলের হরিতলা গ্রামে (তৎকালীন ভারতের অংশ) শ্রীনাথ গোস্বামী ও ভগবতী দেবীর ঘরে জন্ম নেন। তার বাবা-মা ও দিদি ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনধারণ করতেন। তারা তাকে ৪ বছর বয়সে নবদ্বীপের বিখ্যাত সন্ন্যাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দর কাছে দিয়ে দেন। পরে ৬ বছর বয়সে বাড়ি ফিরে শোনেন দিদি না খেয়ে মারা গেছেন। তার বাড়ি ফেরার সাতদিন পর মারা যান বাবা-মাও। পরে ১৯০১ সালে পুনরায় তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ নবদ্বীপে চলে যান।
তাঁর মৃত্যুর খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বহু যোগচর্চাকারী ও অনুসারীরা তাঁর স্মৃতিতে শোকবার্তা প্রকাশ করেছেন। ভারতীয় বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্টজনেরা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শোকপ্রকাশ করে এক্স-এ লেখেন, “যোগ অনুশীলনকারী ও কাশীর বাসিন্দা শিবানন্দ বাবাজীর প্রয়াণের খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর যোগ ও সাধনায় নিবেদিত জীবন দেশের প্রতিটি প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। সমাজের সেবায় যোগের মাধ্যমে অবদানের জন্য তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। শিবানন্দ বাবার শিবলোক গমন কাশীর সমস্ত বাসিন্দা এবং তাঁর অসংখ্য অনুগামীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। এই শোকের মুহূর্তে আমি তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।”
সবশেষ গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসেন ভারতের ধর্মগুরু স্বামী শিবানন্দ। তিনি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে যান। পরে চলে যান হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের দিনারপুর অঞ্চলের শতক গ্রামে ঠাকুরবাণী আশ্রমে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতে ফিরে যান তিনি।
পড়ুন: হবিগঞ্জের সড়কে চারজনের মৃত্যু, স্বজনদের শোকের মাতম
দেখুন: সোলেমান হাজারী এখন হবিগঞ্জে
এস