ঈদ সামনে রেখে তৈরি পোশাক শিল্পে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কাজী মুনিরুজ্জামান। তার দাবি, বন্দরের কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টা খোলা না থাকলে শ্রমিকদের বেতন–বোনাস পরিশোধের জটিলতা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, পণ্য সময়মতো ডেলিভারি না হলে ক্রেতাদের কাছে অর্থ আসবে না, ফলে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়াও সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় যদি বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা না রাখা হয়, তাহলে মালিকপক্ষ সেই দায় নিতে পারবে না।
শ্রমিকদের স্বার্থেই ঈদের আগে বন্দরে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার (২১ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিজিএমইএর আসন্ন নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাক শিল্পে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি স্বপ্ন বাস্তবায়নে সময়োপযোগী, সাহসী ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে ১২ দফা নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন করেন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার মো. আবুল কালাম।
আবুল কালাম জানান, সম্মিলিত পরিষদের লক্ষ্য একটি স্মার্ট, টেকসই ও ভবিষ্যতমুখী পোশাক শিল্প গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে তারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার জন্য একটি ‘এসএমই সাপোর্ট সেল’ গঠন করবেন, যা নীতিগত, আর্থিক ও আইনি সহায়তা দেবে। এছাড়া রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্য আনতে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় প্রবেশের ওপর জোর দেওয়া হবে। ইউরোপ ও আমেরিকার ওপর অতিনির্ভরতা কমিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য ঝুঁকি হ্রাস করাও তাদের লক্ষ্য।
শিল্পে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতে মৌসুমভিত্তিক প্রণোদনার দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর প্রস্তুতি নিতে শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আইওটি, ইআরপি ও ইএসজি বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, এবং সবুজ অর্থায়নের জন্য ‘গ্রিন ফান্ডিং ডেস্ক’ চালুর পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
বিজিএমইএ সদস্যদের জন্য তারা ‘ইপিআইসি’ নামে একটি ওয়ান স্টপ সাপোর্ট সেন্টার চালু করবেন, যেখানে নতুন উদ্যোক্তা, নারী নেতৃত্ব ও এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটালভাবে তথ্য ও প্রশিক্ষণ সেবা পাবে। এছাড়া পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি বিশ্ববাজারে উন্নত করতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ– প্রিমিয়াম এডিশন’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আধুনিক, টেকসই ও উচ্চমানের পণ্যের প্রচার করা হবে।
আবুল কালাম বলেন, ভবিষ্যৎ সংকটে শ্রমিকদের সুরক্ষায় একটি বাধ্যতামূলক মাসিক সঞ্চয়ভিত্তিক শ্রমিক সেবা ফান্ড গঠন করা হবে। একইসঙ্গে, একটি ‘ইউনিফায়েড কোড অব কন্ডাক্ট’ চালুর মাধ্যমে এসএমই কারখানাগুলোর কমপ্লায়েন্স প্রক্রিয়া সহজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ফারুক হাসান পোশাক শিল্পে তাদের নেতৃত্বে আগের সাফল্যগুলো তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ হাসনাত আলম একটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরেন।
পড়ুন : টিএনজেড ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিট বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত