বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও নিউমার্কেট থানায় করা ১৭ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ৪৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজার আদালত তার এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বিভিন্ন মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় তাকে।
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মোট ১৭ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৯ মামলায় মোট ৪৮ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে আলাদা আলাদা মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের ২৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আইনানুযায়ী রিমান্ড মানে হল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসামীকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করবে, কোন মারধোর করা যাবে না। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আসামীর সঙ্গে পুলিশের আচরণ সম্পর্কে আদালতের স্পষ্ট কিছু নির্দেশনাও রয়েছে।
রিমান্ডে নেয়ার কারণ
আইন অনুযায়ী, কোন ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদনের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট কিছু কারণ থাকতে হবে। সেগুলো হল:
যদি কোন মামলায় প্রকৃত আসামীর পরিচয় পাওয়া না যায় তাহলে ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা যায়
কোন মামলায় একাধিক আসামী থাকলে, আটক একজনের থেকে বাকি আসামীদের সম্পর্কে তথ্য জানতে রিমান্ডে নেয়া যায়
ঘটনার ক্লু, ঘটনার বিবরণ বা অপরাধের উদ্দেশ্য জানতে রিমান্ডে নেয়া যায়।
সংবিধানে কী বলা আছে
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ফৌজদারি কার্যবিধির অপপ্রয়োগই নয়, সংবিধানেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট ‘ব্লাস্ট’।
সংস্থাটির এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, সংবিধানের ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদে গ্রেফতার ও পুলিশ হেফাজতে আটককৃত ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হিসেবে কিছু অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এই মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে:
- গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের কারণ জানানো
- আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করতে দেয়া
- গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট উপস্থাপন করা
- ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া পুলিশ হেফাজতে আটক না রাখা
- সকল প্রকার নির্যাতন থেকে মুক্ত রাখা।
গ্রেফতারের সময় ও পরে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অধিকার
হাইকোর্টের রায়ে গ্রেফতারের সময় ও পরে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অধিকার সম্পর্কিত নির্দেশনাসমূহ:
- গ্রেফতারের সময় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেলে আঘাতের কারণ লেখা এবং তাকে চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ হাসপাতাল বা সরকারি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে ডাক্তারের সনদ নেওয়া
- গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির পছন্দমত আইনজীবী বা নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে বা দেখা করতে দেওয়া
- গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনসহ নিকটতম ম্যাজিস্টেটের নিকট হাজির করা
- ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বা তথ্য কেন সঠিক তার বর্ণনা দেয়া ।