ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও আবাসন সংকট নিরসনসহ ৭ দফা দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা কলেজ শাখার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
আজ ২০ মে বেলা ১১:৩০ টায় ঢাকা কলেজ শহীদ মিনারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যায় এবং স্মারকলিপি প্রদান করে।
সংগঠনের ঢাকা কলেজ শাখার সাধারন সম্পাদক মশিউর রহমান-এর সঞ্চালনায় ও ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি নাহিয়ান রেহমান রাহাত এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কলেজ শাখার সহ-সভাপতি সজিব নাথ, দপ্তর সম্পাদক আবুবকর, অর্থ সম্পাদক নাহিয়ান শাবাব, কলা অনুষদের আহ্বায়ক আসিফ আহমেদ এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম।
ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি নাহিয়ান রেহমান রাহাত বলেন, আওয়ামী শাসনামলে ঘুষ, দুর্নীতি এবং অর্থপাচার এককথায় লুটপাটতন্ত্র ভয়ানক আকার ধারণ করেছিলো। বিচারবিভাগসহ রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে দেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা কলেজেও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিলো। ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিলো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথা বারবার সামনে এসেছে। আমরা জানি, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা ছাড়া গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন একদিকে যেমন শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে একইসাথে নানা স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতাকে রুখে দিতে পারে।
তিনি আরো বলেন, একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর যে ন্যুনতম মানসম্পন্ন খাবার দরকার তা ডাইনিং-ক্যান্টিনগুলো নিশ্চিত করতে পারছে না। ডাইনিং-ক্যান্টিনগুলোতে প্রশাসনের পর্যাপ্ত ভর্তুকির অভাব, গ্যাস সংযোগ না থাকা, কর্মচারিদের চাকরি স্থায়ীকরণ না হওয়া এবং প্রশাসনের নজরদারির অভাবে খাবারের দাম বাড়ছে কিন্তু মান কমছে।

সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, ঢাকা কলেজে আবাসন সংকট এতো তীব্র যে কেবলমাত্র ৮৫০ জন অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর জন্য হলে থাকার ব্যবস্থা আছে। একটা বড় অংশের শিক্ষার্থীরা বাইরের মেসগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে ও অপুষ্টিকর খাবার খেতে বাধ্য হয়। পরিবহন ব্যবস্থা যথাযথ না হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। কলেজের ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে বাসের সংখ্যা মাত্র ৮ টি– যার মধ্যে আবার ২ টি বাস অচল অবস্থায় রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সংকট তীব্র হওয়ায় কোনো কোনো বর্ষের ক্লাস বন্ধ থাকে। লাইব্রেরি, সেমিনারে প্রয়োজনীয় বই ও সহায়ক নেই। ল্যাবগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তারা কলেজের ছাত্র-শিক্ষার সংকটগুলো উল্লেখ করে বলেন, এ বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে কোনো সুযোগ নয়, সাধারণ গণতান্ত্রিক অধিকার।
আমরা বিশ্বাস করি, ঢাকা কলেজের এসব সংকট দূর করতে এবং শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ছাত্র-শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই-ই আমাদের পথ দেখাবে।
সংগঠনের সহ-সভাপতি সজিব নাথ নিম্মোক্ত ৭ দফা দাবি পাঠ করেন এবং সমাবেশ শেষে একটি মিছিল কলেজ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপর নেতৃবৃন্দ কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
দাবিসমূহ:
১. দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠনতন্ত্র ও রোডম্যাপ প্রকাশের উদ্যোগ নিন। এযাবৎকালে জমা হওয়া ছাত্র সংসদ ফান্ডের পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রকাশের ব্যবস্থা করুন।
২. প্রথম বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বৈধ সীট নিশ্চিত করুন। আবাসন সংকট নিরসনে বহুতলবিশিষ্ট একাধিক নতুন হল নির্মাণের উদ্যোগ নিন। অবিলম্বে পুরনো হলগুলো সংস্কার করতে হবে।
৩. ডাইনিং-ক্যান্টিনে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে খাবারের দাম কমাতে হবে, মান বাড়াতে হবে। গ্যাস সংযোগ চালু এবং কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করন করতে হবে।
৪. পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। ক্লাসরুম-লাইব্রেরি-সেমিনার এবং ল্যাবের সংখ্যা ও সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। অবিলম্বে নতুন ভবনের লিফট চালু করতে হবে।
৫. পরিবহন সংকট সমাধানে বাস ও রুট সংখ্যা বাড়াতে হবে।
৬. মেডিক্যাল সেন্টারে সার্বক্ষনিক ডাক্তার নিয়োগসহ ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি করতে হবে।
৭. নামে-বেনামে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ কর।