এমডি সানি আহম্মেদ
দীর্ঘ ১৫ বছরের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির জঞ্জাল পরিষ্কার করতে বেশ তাড়াহুড়া করে কাজ করছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যাদের বিরুদ্ধেই বিগত সময়ের নানা অভিযোগ উঠে এসেছে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থদন্ড থেকে শুরু করে গ্রেপ্তার পর্যন্ত করা হচ্ছে। যদিও শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিএসইসির এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে বেশ মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব হওয়ায় বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগে রাস্তায়ও নেমেছেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।
কিন্তু সেদিকে কোনো কর্ণপাত না করে শেয়ারবাজারকে জঞ্জালমুক্ত করতে নিজেদের সিদ্ধান্ত অটল রয়েছে বিএসইসি। গতকাল শেয়ারবাজার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আজ আবার দেশের শীর্ষ ৩টি গ্রুপের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বিএসইসি চেয়ারম্যান। মেঘনা গ্রুপ, সিটি এবং পিএইচপি গ্রুপের অধীনে থাকা শক্তিশালী কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারে সংস্কার, উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে অচিরেই বিনিয়োগকারীরা একটি স্বচ্ছ, গতিশীল এবং আধুনিক পুঁজিবাজার পাবেন বলে আশা করছে বিএসইসি।
এ ব্যাপারে বিএসইসির গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন নাগরিককে জানান, “পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ট্রাস্কফোর্স গঠন করেছে যেখানে আমাকে কাজ করার জন্য সদস্য করা হয়েছে। আমরা কি কি কাজ করবো সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে বিএসইসি নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা সেই কাজগুলো সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করবো। এতে বিএসইসিরও কোন হস্তক্ষেপ থাকবে না।”
জানা যায়, গত ১৮ আগস্ট শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তিনি দায়িত্ব গ্রহণকালে শেয়ারবাজারের সূচক ছিল ৫৭৭৮.৬৪ পয়েন্ট। বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ১ হাজার ৭৮ কোটি ২৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা। আজ ৮ অক্টোবর শেয়ারবাজারের সূচক দাঁড়িয়েছে ৫৩২৩.২২ পয়েন্ট। বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩০১ কোটি ৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের সময়কালে এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারের মূলধন কমেছে ৩৪ হাজার ৭৭৭ কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার টাকা।
ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, আজ ৮ অক্টোবর ডিএসই’র ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.২২ শতাংশ বা ১১.৮৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করেছে ৫ হাজার ৩২৩.২২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১.৬৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করেছে ১ হাজার ১৮৭.৭৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৩.০১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করেছে ১ হাজার ৯৩৯.২১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৪০০ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪২ টির, কমেছে ১৯৫ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৩ টির। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে আজ ৩৫.৫০ শতাংশ শেয়ারের দর বেড়েছে। সারাদিনে ডিএসইতে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮৫ টি শেয়ার ১ লাখ ১৭ হাজার ৪১ বার হাতবদল হয়েছে। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
গত কার্যদিবসে অর্থাৎ আজ ৭ অক্টোবর ডিএসই’র ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ০.৮১ শতাংশ বা ৪৩.৭২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করেছিল ৫ হাজার ৩৩৫.০৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১.৪৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১ হাজার ১৮৯.৩৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ২২.০৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১ হাজার ৯৪২.২২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বৃদ্ধি পায় ৫৩ টির, কমে ২৮৮ টির এবং অপরিবর্তিত রয়ে ৫৫ টির। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে গত কার্যদিবসে ১৩.৩৮ শতাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধি পায়। সারাদিনে ডিএসইতে ১২ কোটি ৮৬ লাখ ২ হাজার ২১১ টি শেয়ার ১ লাখ ১৯ হাজার ১৮৩ বার হাতবদল হয়। আর দিন শেষে লেনদেন হয় ৩৬৬ কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।
সে হিসেবে আজ লেনদেন কমেছে ১১ কোটি ১৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
এদিকে আজ দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সাধারণ মূল্য সূচক সিএএসপিআই ০.৩৪ শতাংশ বা ৫১.০১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করেছে ১৪ হাজার ৯৬১.৭৪ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ১৯৩ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭০ টির, কমেছে ৯৫ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮ টির। আজ দিন শেষে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৭৯৩ টাকা।
উল্লেখ্য, শেয়ারবাজার উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে শেয়ারবাজার সংস্কারে পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং–এর জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।
বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি নির্ধারণ ১৭টি। তবে পরে আরও কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে টাস্কফোর্সের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কার্যপরিধি বাড়াতে পারবে বিএসইসি।
টাস্কফোর্সকে তাদের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে যৌক্তিক সময়ে টাস্কফোর্স তাদের সুপারিশ বিএসইসিতে জমা দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিএসইসি।