
কাজু সুস্বাদু একটি বাদাম, এর স্বাদের আসলেই কোনো তুলনা নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, কাজু বাদাম প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। ইদানিং অনেক ডাক্তার রোগীদের নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কাজু বাদামে বিভিন্ন ভিটামিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক খনিজ উপাদান রয়েছে। যেহেতু কাজুতে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি থাকে, তাই দৈনিক ৫-১০টা কাজু বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট। এছাড়াও আরো অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এই বাদাম।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত যদি একমুঠ কাজু বাদাম খাওয়া যায়, তাহলে শরীরে পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপাকার।
ক্যান্সার দূরে থাকে-
প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি কাজ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেখানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেখানে ক্যান্সার কোষের খোঁজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এজন্যই প্রতিদিন একমুঠ করে কাজু বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। আসলে এই বাদমটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। পাশাপাশি টিউমার যাতে দেখা না দেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। কাজু বাদামে থাকা প্রম্যান্থোসায়ানিডিন নামের একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে-
যাদের রক্তচাপ প্রায়ই ওঠানামা করে, তারা নির্দ্বিধায় কাজু বাদাম খেতে শুরু করতে পারেন। কারণ এই বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর আমাদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকা কিন্তু খুবই জরুরি। নইলে যে কোনো সময় বড় বিপদের আশঙ্কা থাকে।
হৃদযন্ত্রে ক্ষতির আশঙ্কা কমে–
কাজু বাদামে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট একদিকে যেমন ক্যান্সার দূরে রাখে, তেমনি হৃদযন্ত্রের নানাবিধ রোগ প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যাদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে, তাদের জন্যে কাজু বাদামের বিকল্প নেই।
শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে-
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেকেই ভোগান্তি পোহান। কি খাবো কি খাবোনা, এই চিন্তা করেই কাবু হই আমরা। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কামানো জরুরি। কাজুতে রয়েছে ওলিসিক নামে এক ধরনের মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দেহে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ কাজে আসে। তাই তো নিয়মিত এই বাদম খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।
সংক্রমণের আশঙ্কা কমে-
কাজু বাদামের জিঙ্ক, ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। তাই আপনি যদি ইনফেকশনের শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে প্রতিদিনের ডায়েটে কাজু বাদামের উপস্থিতি তা নিরাময় করতে সাহায্য করবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে-
আমাদের দেশে সুগার-রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। তাতে বাদাম খাওয়ার প্রয়োজনও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে- প্রোটিন ও ফাইবারসমৃদ্ধ কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে শরীরের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। তাই পরিবারে যদি ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে, তাহলে প্রতিদিন একমুঠ করে বাদাম খেতে শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে।
নার্ভের ক্ষমতা বাড়ে-
কাজু বাদামের আরেকটি বিশেষ গুণ হচ্ছে, এটি বুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়তে সাহায্য করে। বাদাম শরীরের থারা ম্যাগনেসিয়াম নার্ভের ক্ষমতা বাড়িয়ে সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একবার ব্রেন পাওয়ার বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে ব্রেনের কগনিটিভ ফাংশনেরও উন্নতি হয়। মূলত সে কারণেই গর্ভবতী মায়েদের বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। তাতে করে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা হয়।
চুলের সৌন্দর্য বাড়ে-
কপার হল সেই খনিজ, যা চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের গোড়াকে শক্তপোক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে কাজুতে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন কিভাবে কাজু চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়, কাজু বাদামে থাকা কপার শরীরের অন্দরে এমন কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা চুলের কালো রংকে ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
সুতরাং আর দেরি না করে আমরা আমাদের খাবারের তালিকায় কাজু বাদাম যোগ করে ফেলতে পারি। পরিবারের ছোট বড় সবার জন্যই এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর সুস্থ শরীর ও মন একটা সুন্দর জীবনের জন্য খুবই জরুরি।
জাক/শাই/ফাআ
