
‘ক্যাসিনো’ শব্দটি এই কয়দিনে খুব বেশি শোনা যাচ্ছে। আলোচনায় আসছে ক্যাসিনো নিয়ে নানা তথ্য। অনেকের কাছে ক্যাসিনো ওপেন সিক্রেট হলে, কিছু মানুষ অবাক হয়েছেন ক্যাসিনোর খবর শুনে। নানা প্রশ্ন জাগছে ক্যাসিনো ও ক্লাব নিয়ে।
জেনে নেয়া যাক জুয়া নিয়ে দেশের আইন, ক্যাসিনো নিয়ে সাম্প্রতিক বিষয়াবলী।
ঢাকায় কতটি ক্যাসিনো আছে?
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন ঢাকায় অন্তত ৬০টি ক্যাসিনো আছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় এ রকম অন্তত ১০টি ক্লাবে নিয়মিত ছোট-বড় জুয়ার আসর বসে। এছাড়া গুলশান ও বারিধারা এলাকায়ও কয়েকটিতে ক্যাসিনোর আদলে জুয়া চলে।
জুয়া নিয়ে বাংলাদেশের আইনে কি বলা আছে?
১৯৭২ সালের সংবিধানে জুয়া বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রকে নির্দেশনা দেয়া আছে। যদিও এ বিষয়ে আর নতুন কোনো আইন হয়নি।
জুয়ার বিষয়ে ‘প্রকাশ্য জুয়া আইন ১৮৬৭’ আইনটি কার্যকর আছে। সেখানে অবশ্য ক্যাসিনোর কথা উল্লেখ নেই।
তবে আইনে আছে,
১. কোন ব্যক্তি যে কোন ঘর, তাবু, কক্ষ, প্রাঙ্গন বা প্রাচীর বেষ্টিত স্থানের মালিক, রক্ষণাবেক্ষণকারী বা ব্যবহারকারী হিসেবে অনুরূপ স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে দিলে এবং জ্ঞাতসারে বা স্বেচ্ছায় অন্য লোককে তা সাধারণ জুয়ার স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে দিলে বা অনুরূপ স্থানে কেউ জুয়া খেলার উদ্দেশে অর্থ প্রদান করলে বা খাটালে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
২. এমনকি ‘তাস, পাশা, কাউন্টার অর্থ বা অন্য যেকোনো সরঞ্জামসহ যেকোনো ব্যক্তিকে ক্রীড়ারত বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলেও শাস্তি দেয়ার বিধান আছে আইনে।
৩. কেউ যদি প্রকাশ্য রাস্তায়, বাজারে, মেলায় বা অন্য কোন প্রকাশ্য স্থানে কোন পশু বা পাখিকে লড়াইয়ে নিয়োজিত করে অথবা উক্ত স্থানে অনুরূপ পশু বা পাখির প্রকাশ্য লড়াইতে সাহায্যকারী যে কোন ব্যক্তি দণ্ডিত হবে।
জুয়া খেলার শাস্তি
মালিক বা রক্ষণাবেক্ষণকারী, জুয়ার ব্যবস্থাপক বা এতে কোনো সাহায্যকারী তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এ রকম কোনো ঘরে তাস, পাশা, কাউন্টার বা যেকোনো সরঞ্জামসহ কোনো ব্যক্তিকে ক্রীড়ারত (জুয়ারত) বা উপস্থিত দেখতে পাওয়া গেলে তিনি এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। পুলিশ জুয়ার সামগ্রীর খোঁজে যেকোনো সময় (বলপ্রয়োগ করে হলেও) তল্লাশি চালাতে পারবে বলেও আইনে উল্লেখ রয়েছে।
ক্যাসিনো ও পুলিশ
গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলে ক্লাবপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও দিলকুশা ক্লাব থেকে অন্তত ১২টি ক্যাসিনো বোর্ডসহ জুয়া খেলার বিপুল পরিমাণ সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তবে এই ক্লাবগুলোয় যে জুয়া খেলা হয়, সে ব্যাপারে আগে থেকে কোনো তথ্য পুলিশের কাছে ছিল না বলে দাবি করেছেন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শিবলী নোমান।
রাজধানীতে ক্যাসিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে ২০১৭ সালের জুনে। পরের বছরের মার্চে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একটি সাধারণ ডায়েরি করে পল্টন থানায়। তারপরও ক্যাসিনোগুলো বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি পুলিশ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৮ জুন জননিরাপত্তা বিভাগের তৎকালীন উপসচিব তাহমিনা বেগম পুলিশ সদর দপ্তরকে ক্যাসিনো সম্পর্কিত একটি অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠান। অভিযোগটি করেছিলেন মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লা এলাকার বাসিন্দা মোবারক খান।
২০১৮ সালে আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ অবৈধ ক্যাসিনো সম্পর্কে জেনেছিল। ২০১৮ সালের ২০ মার্চ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রীতম-জামান টাওয়ারের ১৩-১৪ তলার ক্যাসিনোতে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান শেষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতিঝিল সার্কেলের পরিদর্শক মুহম্মদ সাজেদুল ইসলাম পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ক্যাসিনো নিয়ে সাম্প্রতিক মন্তব্য
গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি কিংবা সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি যেই হোক, কাউকেই ক্যাসিনো ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। ক্যাসিনো আমাদের দেশে আইনসঙ্গত ব্যবসা নয়”।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘শুধু ক্যাসিনো নয়, সব অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। আমরা বিভিন্ন বারের যেমন লাইসেন্স দিয়ে থাকি, তেমনি ক্যাসিনো চালাতে গেলে সরকারের অনুমোদন লাগবে। যারা এ ব্যবসা করছে তারা সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়নি। তারা অবৈধভাবে এ কাজটি চালাচ্ছিল। সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।’
গত ১৯ সেপ্টেম্বর যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, “বলা হচ্ছে, ৬০টি ক্যাসিনো আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এত দিন কী করছিল? তারা কি আঙুল চুষছিল? তাহলে যে ৬০ জায়গায় এই ক্যাসিনো, সেই ৬০ জায়গার থানা পুলিশ ও র্যাবকেও গ্রেফতার করা হোক।”
রাজধানীর ক্যাসিনোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। তবে তার বক্তব্যকে নিজস্ব বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
