
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিচু একটি দেশ, নাম তার নেদারল্যান্ডস । টিউলিপ ও অন্যান্য ফুলের জন্য বিখ্যাত এই দেশ। ‘ফ্লাওয়ার শপ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বলা হয় নেদারল্যান্ডসকে। টিউলিপের স্বর্গরাজ্যে গেলে আপনি নিঃসন্দেহে হারিয়ে ফেলবেন নিজেকে। রঙের বাহার আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার।
নেদারল্যান্ডসে টিউলিপের আগমন ঘটে ষোড়শ শতাব্দীতে। ওলন্দাজদের যখন স্বর্ণযুগ চলছিল, তখন ফুলের চাষও ছিলো রীতিমতো তুঙ্গে। চিত্রাঙ্কনে কিংবা উৎসবে টিউলিপের জনপ্রিয়তা ছিল সীমাহীন। ওলন্দাজরা যখন যেখানে বসতি গড়েছে, সাথে নিয়ে গেছে টিউলিপ। তাই আমেরিকার যেসব জায়গায় ডাচদের বসতি বেশি, সেখানেই দেখা মেলে টিউলিপের।
নেদারল্যান্ডসের ছোট্ট শহর লিসে। এখানে রয়েছে কিউকেনহফ, যা পৃথিবীর অন্যতম বড় বাগান। ৩২ হেক্টর জমির ওপর অবস্থিত এই বাগানে বছরে প্রায় ৭০ লাখ টিউলিপ ফুল ধরে, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার কালো টিউলিপসহ নানা প্রজাতির বর্ণিল টিউলিপ। কখনও ‘কিচেন গার্ডেন’ আবার কখনওবা ‘গার্ডেন অব ইউরোপ’ নামে পরিচিত এই বাগানের গোড়াপত্তন ঘটে পঞ্চদশ শতকে। প্রতিবছর মধ্য মার্চ থেকে মধ্য মে পর্যন্ত সময়ে বাগানটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। একটি বাইক বা নৌকা ভাড়া করে পর্যটকরা পুরো বাগান ঘুরে দেখতে পারেন। আর এ সময়ে হয়ে থাকে টিউলিপ উৎসব। তবে এই উৎসব শুধু নেদারল্যান্ডসেই নয়, আমেরিকাসহ বেশ কিছু জায়গায় এটি পালন করা হয়।
টিউলিপের অর্থ হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ বা গভীর ভালোবাসা। তুর্কি ও পারস্যের মধ্যকার অর্থাৎ ফরহাদ আর শিরির প্রেম কাহিনীকে কেন্দ্র করে এই নামকরণ করা হয়। আর যেহেতু টিউলিপ বসন্তের প্রথম দিকের ফুল, তাই এই ফুলকে পুনর্জন্মের বা নবজন্মের অর্থ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
গোলাপী টিউলিপ হচ্ছে আনন্দ ও দৃঢ়তার প্রতীক, বেগুনি আভিজাত্যের, হলুদ প্রফুল্ল চিন্তাধারার এবং সাদা ক্ষমার প্রতীক।
টিউলিপকে ইরান ও তুরস্কে ফার্সি ভাষায় লালে নামে ডাকা হয়। এটি তুরস্কের জাতীয় ফুল হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের অর্থনীতিতেও টিউলিপের ভূমিকা রয়েছে। অনেক সিনেমা, গল্প, কবিতা, উপন্যাসে জায়গা করে নিয়েছে টিউলিপ, ছড়িয়ে দিয়েছে তার রঙের ছটা।
তাস/তুখ
