
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবর সংগ্রহ শেষে ওপার বাংলার সবাই ফিরেছিলো, ফেরেনি শুধু দুজন। ৫২ বছর পর তবুও অপেক্ষা, ওরা ফিরবে। যদি নাও ফেরে, তবে স্বীকৃতি পাক, পাক কোনো সন্মাননা। এমন প্রত্যাশা নিয়ে বুক বেধে আছেন সহপাঠী, সহকর্মী ও আত্মীয়রা।
বলছিলাম, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ কলকাতার দুই তরুণ সাংবাদিকের কথা। কলকাতা ও আগরতলা ঘুরে এসে আরো জানাচ্ছেন দীপ আজাদ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় সদ্য পাস করে দৈনিক অমৃতবাজারে সাব এডিটর হিসেবে যোগ দেয় দীপক বন্দোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ব্যাচ জুনিয়র সুরজিৎ ঘোষাল শিক্ষানবিশ ফটোসাংবাদিক হিসেবে যোগ দিলেন হিন্দুস্তান ষ্ট্যাডার্ঢ এ।
প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে তখন পশ্চিম বঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে শরনার্থীরা আসতে শুরু করেছে। সীমান্ত পার হয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে হবে। দুই পত্রিকার দুই নবীন সাংবাদিক কিভাবে এক হলেন? কিভাবেই যুদ্ধ সংবাদ সংগ্রহের মতো জীবন ঝুকিতে পা ফেললেন তারা? সেই কথাই জানালেন সহকর্মী মানিক বন্দোপাধ্যায়।
৭১ সালের ২৩ মার্চ বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন দীপক ও সুরজিৎ। তবে আরেকটি সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী জেলাগুলো ঘুরে ওরা আগরতলা পৌছায়। আগরতলা দিয়ে কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম যাবার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
কলকাতার দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক কল্যাণ বসুর সাথে আগরতলায় দেখা হয় তরুণ এই দুই সাংবাদিকের। তার মুখেই শুনি সেদিনকার ঘটনা।
দীপক বন্দোপাধ্যয়ের কোন আত্মীয় স্বজনের খোঁজ পাওয়া যায় নাই। বাবা এক সময় রেলে চাকরি করতেন। সুরজিৎ ঘোষাল ছিলেন বিধাব মায়ের একমাত্র পুত্র। ছেলে ফিরবে সেই অপেক্ষায় ক্লান্ত হয়ে ১৯৮৩ সালে সুরজিতের মাও মারা যান। কলকাতায় দেখা হলো সুরজিতের মামাতো ভাই প্রসীদ বসুর সাথে।
অকুতোভয় দুই সাংবাদিকের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার পুরো কৃতিত্ব কলকতা প্রেসক্লাবের। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাংলাদেশের ১৩ জন সাংবাদিকের তালিকায় ভারতের এই সাংবাদিককে অর্ন্তভ’ক্ত করার দাবি সসামনে নিয়ে এসেছে তারা।
কুমিল্লার ময়নামতির বধ্যভুমিতে অসংখ্য শহীদের সাথে চিরতরে ঘুমিয়ে আছেন ওপার বাংলার দুই কলমযোদ্ধা।
দীপক দেবনাথ/ফই
