
রোজা প্রায় অর্ধেক হয়ে এলো। তাই এখন থেকে শরীর একটু বেশিই ক্লান্ত হবে। তার ওপর এবার প্রচণ্ড গরম। এই গরমে আমাদের প্রায় ১৫ ঘণ্টা রোজা রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে রোজাদারের শরীর বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। রমজানের প্রথম দিকে আমরা সবাই ইফতারে পেট পুরে মুখরোচক খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু কিছুদিন গেলেই টের পাওয়া যায় শরীরের জন্য কতখানি ভালো হচ্ছে এসব খাবার। মজা লাগলেও তেলে ভাজা খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো না। এ ব্যাপারে একটু সতর্ক হওয়া দরকার।
রমজান মাসে কী রকম খাবার খাওয়া উচিত বা উচিত না– এ সম্পর্কে আমরা অনেক রকমের তথ্যই পেয়ে থাকি টেলিভিশন বা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে। তারপরও নিজেদের সামলানো যেন দায় হয়ে যায়। তবে সুস্থ থাকতে হলে নিজেকে অবশ্যই খাবারের বিষয়ে সংযত করতে হবে।
সর্বপ্রথম এ সময় বেশি করে পানি খেতে হবে। অনেকেই ইফতারের পর পর একসাথে অনেক পানি পান করে থাকেন। কিন্তু সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইফতারে একসাথে বেশি পানি পান না করে ২ ঘন্টা পর পর ২ গ্লাস করে পানি পান করা শ্রেয়। সারাদিন যেহেতু খাওয়া হচ্ছে না তাই রোজা খোলার পর থেকে সেহরি পর্যন্ত আড়াই থেকে তিন লিটার পানি সবার জন্য প্রযোজ্য। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শরবত, ফলের জুস পান করা ভালো। এখন আমের সময়। তাই ম্যাংগোশেইক খেতে পারেন। তবে বোতলজাত বিভিন্ন ধরনের লাল পানীয় খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য একদম ভালো না।
এবার ইফতারের ভারি খাবারের পর্বে আসা যাক। মনে রাখবেন, এই সময় যত কম তৈলাক্ত আর লবণাক্ত খাবার খাওয়া যায় ততই ভালো। ইফতারের জন্য অনেক ভাজাপোড়া তৈরি করা হয়। যারা এসব খেতে খুব বেশি পছন্দ করেন, তাদের জন্য উপদেশ হচ্ছে সবকিছু পরিমাণমতো খান। বেশি খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক না। কয়েকটি পদ থেকে অল্প অল্প করে খাওয়া ভালো। যেমন বেগুনি, পেঁয়াজু ২-৩টি। চপ ১টি। আর ছোলা-মুড়ি পরিমাণ মতো। খেজুর প্রাণ শক্তিতে ভরপুর একটি খাবার। তাই ইফতারে খেজুর খাওয়া খুবই ভালো। যাদের অতিরিক্ত ওজন তারা ইফতারে জুস, লাচ্ছি, বোরহানি ইত্যাদি তরল খাবার খান। আর স্যুপ, টক-মিষ্টি দই, চিঁড়া, মুড়ি, ফ্রুটসালাদ– এ ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। তাদের জন্য তো ভাজাপোড়া বলা যায় একদমই বাদ।
অনেকে আছেন যারা ইফতারে ভাত, রুটি খেতে পছন্দ করেন। এতেও কোনো সমস্যা নেই। তবে অনেক না খেয়ে পরিমাণ মতো খান। গুরুপাক বা অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
অনেক রোজাদার ইফতারের পরে রাতে ভাত খেয়ে থাকেন। তাদের জন্য পরামর্শ হল– ইফতারি একটু হালকা করে খান। ঘণ্টা দুই পরে ভাত খেয়ে নিন। ইফতারে ভরপেট খেয়ে আবার রাতে ভাত খেলে নিজেই অস্বস্তি বোধ করবেন। আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ২ থেকে ৩ ঘণ্টা আগে খেয়ে ফেলা ভালো।
সেহরিতে ভাত, রুটি, দুধ-চিঁড়া, মুড়ি বা ভাত-মাছ-সবজি খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের পর রাতের খাবার বেশি খেয়ে ফেললে সেহরিতে ভারী কিছু না খেয়ে দুধ-কলা-চিঁড়া এসব খেতে পারেন।
রোজার সময় খাবারের ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকলে সুস্থ থাকে দেহ। আর শরীর ভালো থাকলে সুন্দরভাবে পুরো মাস সিয়াম সাধনা করতে পারবেন।
তুখ/মাও
