
গিটারের টান, ঝাঁকড়া চুলের ঝাকি আর ঝাঁঝালো কণ্ঠের জাদুতে বিমোহিত দেশের লাখো তরুণ-তরুণী। বলছি, কিংবদন্তি পপ তারকা মাহফুজ আনাম জেমসের কথা।
বাংলা সংগীতের ইতিহাসে যে কজন কিংবদন্তি পপ তারকা এসেছেন, জেমস তাদের অন্যতম। জেমস, নগরবাউল বা গুরু এসব নামেই তিনি দেশব্যাপী পরিচিত।
বাংলা ব্যান্ড সংগীতের এই গুরু ৫৬ বছর পেরিয়ে ৫৭ বসন্তে পা দিয়েছেন। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর তিনি নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

২০১৫ সালে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ১০টি বিলবোর্ড টাঙিয়ে প্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমসকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের ছেলে প্রিন্স।

এবার জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জেমসের জন্মদিনে ভিন্ন কিছুর আয়োজন করেন ওই ভক্ত। ২০১৪ সালেও তিনি জেমসের জন্মদিনে বিশাল এক কেক নিয়ে ঘুরে বেড়ান ঢাকা শহরের নানা জায়গায়।
এরপর ২০১৭ সালের জন্মদিনে পুরো অক্টোবর জুড়ে সারা দেশে এক কোটি গাছ লাগান জেমসের ভক্তরা। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় জেমসের ৫৩টি প্রতিকৃতিও টাঙানো হয়।

পরবর্তীতে ২০১৮ সালেও নানা আয়োজনে জেমসের জন্মদিন পালন করেন তার পাগল ভক্তরা। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে পাল্টে যায় চিত্র। কারণ তার আগের বছরের ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে চলে যান বাংলা ব্যান্ড জগতের আরেক কিংবদন্তি ও গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চু।
জেমস এবং আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বন্ধুর মৃত্যুতে জেমস এতটাই কষ্ট পেয়েছিলেন যে, ২০১৮ সালে একটি লাইভ কনসার্টে তাকে অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়। পরের বছর জন্মদিন আসার আগেই গুরু ঘোষণা দেন যে, তিনি জন্মদিনের কোনো উৎসব পালন করবেন না।
পাশাপাশি ভক্তদেরও অনুরোধ করেন কোনো ধরনের আয়োজন না করতে। যার কারণে ২০১৯-২০২০ এই দুই বছর জেমসের জন্মদিনে তেমন কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি। একই অবস্থা এ বছরও।

জেমস বর্তমানে ‘নগরবাউল’ ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট এবং ভোকালিস্ট। পূর্বে যেটি ‘ফিলিংস’ নামে পরিচিত ছিল। জেমস তার স্বতন্ত্র কণ্ঠ ও স্টাইলের জন্য বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি বলিউডের কিছু হিন্দি ছবিতেও গান গেয়েছেন।
ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি জেমসের গভীর টান থাকলেও তাতে পরিবারের সমর্থন ছিল না। গানের জন্য বাবার সঙ্গে অভিমান করে কিশোর বয়সে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। থাকতে শুরু করেন চট্টগ্রামের একটি মেসে।

ওই মেসে থাকাকালীনই কয়েকজন বন্ধু মিলে ‘ফিলিংস’ নামের ব্যান্ড দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে সেই ব্যান্ড দলের প্রধান গিটারিস্ট ও কণ্ঠদাতা হিসেবে সংগীতে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন।
বাংলা ব্যান্ড সংগীতে কাজ করার কারণে পশ্চিমবঙ্গেও বেশ জনপ্রিয় জেমস। ২০০৪ সালে বাঙালি সংগীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে তিনি কাজ করেন। ২০০৫ সালে বলিউড সিনেমা ‘গ্যাংস্টার’-এ প্রথম কণ্ঠ দেন জেমস।
ওই সিনেমায় তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। এরপর তিনি ‘লামহে’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ এবং ‘ওয়ার্নিং’ সিনেমাতেও গান গেয়েছেন।

পারিবারিক জীবনে দুই কন্যা জান্নাত, জাহান, এক ছেলে দানেশ এবং স্ত্রী বেনজির সাজ্জাদকে নিয়ে জেমসের সংসার। বেনজির জেমসের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার প্রথম স্ত্রীর নাম রথি। ২০০২ সালে আলাদা হয়ে যান তারা।
সংগীতের পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবেও সুনাম রয়েছে জেমসের। গাজী আহমেদ শুভ্রর সঙ্গে ‘রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট’ নামে একটি প্রডাকশন হাউজ পরিচালনা করেন তিনি।
এখান থেকে ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি ভিডিওচিত্র তৈরি করেন। এছাড়া প্রচুর রিয়্যালিটি শো প্রযোজনা করেছেন তিনি।
ফই//