
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্তান ও তাঁর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত ১৯ ফেব্রুয়ারি মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেন। আগামী ৬ মার্চ অভিযোগপত্রটি বিচারকের স্বাক্ষরে গ্রহণের জন্য তারিখ রয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগপত্রভুক্ত পাঁচ আসামি হলেন যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া। সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের নির্দেশদাতা হিসেবে শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে পরামর্শদাতা হিসেবে ওই ষড়যন্ত্রে সহযোগিতার অভিযোগ। মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়াকে অভিযোগপত্রে পলাতক দেখানো হয়েছে। মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এই ষড়যন্ত্রে অর্থ যোগানোর পাশাপাশি পরামর্শদাতা হিসেবে যুক্ত ছিলেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কাছ থেকে সজীব ওয়াজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন এবং পরে তা অন্য আসামিদের সরবরাহ করেন। বিনিময়ে প্রায় ৩০ হাজার ডলার পেয়েছিলেন বলে মার্কিন নথিতে উল্লেখ করা হয়। রিজভী তার বন্ধু মিল্টন ভূঁইয়ার মাধ্যমে ওই সব তথ্য ঢাকায় মাহমুদুর রহমানকে পাঠিয়েছিলেন বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। এ কাজে এফবিআই-এর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে ২০১৫ সালের ৪ মার্চ রিজভীকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয় নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। ওই রায়ের পর জয়কে অপহরণের চক্রান্ত করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৩ অগাস্ট গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৭ ও ১২০ (বি) ধারায় ঢাকার পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের আগে মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে একত্রিত হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
২০১৬ সালের এপ্রিলে শফিক রেহমানকে তার ইস্কাটনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সে সময় গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইস্কাটনে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে জয় সংক্রান্ত কিছু তথ্য ও গোপনীয় নথিপত্র সেখানে পাওয়া গেছে। পাঁচ মাস কারাগারে থাকার পর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি পান তিনি। পরে হাকিম আদালত এ মামলায় তাকে পুলিশ প্রতিবেদন পর্যন্ত জামিন দেয়।
অপর আসামি খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহের এক মামলায় ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে আমার দেশ কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার হন। পরে কারাবন্দি অবস্থায় ২০১৬ সালের এপ্রিলে তাকে জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সেসময় জানানো হয়েছিল, মাহমুদুর রহমান জয়ের গতিবিধি, তার কর্মক্ষেত্র, পরিবারের সদস্যরা কখন কোথায় কী করছে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য পেয়েছিলেন রিজভীর বন্ধু মিল্টন ভূঁইয়ার কাছ থেকে, যা একজন মানুষকে অপহরণ করার জন্য যথেষ্ট। ২০১৬ সালের নভেম্বরে মাহমুদুর রহমানও জামিনে মুক্তি পান।
