
নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির চূড়ান্ত দাবিনামা ইস্যু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের দায়ের করা ভ্যাট ফাঁকির মামলার প্রেক্ষিতে ওই দাবিনামা জারি হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওই টাকা জমাদানের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের বিরুদ্ধে ২০১১-১২ থেকে ২০১৪-২০১৫ পর্যন্ত চার বছরের হিসাব তদন্ত ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া যায়। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের দায়ের করা মামলার ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা জমা দিতে আগামী ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় এই পাওনা ভ্যাট আদায়ে কঠোর অবস্থানে যাবে এনবিআরের ভ্যাট কর্তৃপক্ষ।
আজ ভ্যাট গোয়েন্দার একটি মামলার সূত্রে এনবিআরের ভ্যাট কর্তৃপক্ষ এই নোটিশ জারি করেছে। ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, ভ্যাট গোয়েন্দা নারায়ণগঞ্জের অভিজাত ক্লাবের বিরুদ্ধে ২০১১-১২ থেকে ২০১৪-২০১৫ পর্যন্ত চার বছরের হিসাব তদন্ত করে ৩.৭৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি বের করে। যথাসময়ে ভ্যাট পরিশোধ না করায় আরও ৩.৮২ কোটি টাকার সুদ বলে সুপারিশ করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর তদন্ত প্রতিবেদন নিষ্পত্তির জন্য ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারের নিকট পাঠানো হয়।
আরও জানায়, দীর্ঘ শুনানি ও মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ভ্যাট গোয়েন্দার দায়ের করা মামলার ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ বহাল রাখা হয়। ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের জারি করা নোটিশে ভ্যাট গোয়েন্দার দাবি করা ৩.৭৫ কোটি টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই টাকা জমা দিতে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ অনুসারে মূল টাকা জমা দেয়ার পর নতুন করে সুদ হিসাব করে তা আদায় করা হবে।
নারায়ণগঞ্জের ৯৫, বঙ্গবন্ধু রোড নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেড অবস্থিত। ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় ভ্যাট গোয়েন্দার একজন সহকারী পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল ক্লাবের ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর হতে ২০১৫ সালের আগষ্ট পর্যন্ত আয়কর অফিস ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে প্রতিষ্ঠানের পেশ করা বার্ষিক সিএ রিপোর্ট ও অন্যান্য দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়।
এসব প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সিএ ফার্মের রিপোর্টে প্রদর্শিত বিভিন্ন সেবার সরবরাহের বিপরীতে ৩৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৮ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৫৪৩ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ২২৬ টাকার ফাঁকি বের হয়। বিভিন্ন সেবা সরবরাহের বিপরীতে প্রযোজ্য এই ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ২ কোটি ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৫ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে।
তদন্ত অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটি ক্লাব বারে মাদক জাতীয় পণ্য সরবরাহের বিপরীতে প্রদেয় সম্পূরক শুল্ক বাবদ কোনো টাকা পরিশোধ করেনি। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৪৭ টাকার ফাঁকি বের হয়। সেখানে ২ শতাংশ হারে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৮ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য হবে। এছাড়া তদন্ত অনুসারে নিরীক্ষা মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট অনুযায়ী উৎসে সুদ বাবদ আরও ১ কোটি ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৫১ টাকার ভ্যাট আদায়যোগ্য হবে।
ভ্যাট গোয়েন্দা জানায়, ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট মামলার সব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ভ্যাট গোয়েন্দার প্রতিবেদনটি ভ্যাট আইন ১৯৯১ এর ধারা ৫৫(৩) অনুসারে সঠিক ও চূড়ান্ত বলে রায় দেয়।
