
সাইফুল শাহীন
বাসা থেকে বের হয়েছি গুলশান যাবো বলে। সেখানে এক বড় ভাই এর সাথে দেখা করে তারপর অফিসে যাবো। আমার ব্যক্তিগত বাহন ভেসপা স্কুটি নিয়ে রওনা হলাম মহাখালী হয়ে গুলশানের দিকে। গুলশানে এসে দেখি রাস্তার পাশে একটি ভবনের সামনে কিছু মানুষের ভিড়, দূর থেকে কিছু ভাঙচুরের শব্দ পেলাম। ভেসপাটা রাস্তার একপাশে দাঁড় করিয়ে এগিয়ে গেলাম। পেশাগত কারণেই চলার পথে কোনো ঘটনার সম্মুখীন হলে তা এড়িয়ে যেতে পারিনা সচরাচর। দেখি কিছু শ্রমিক ভবনটির সামনের অংশের যতটুকু মানুষের পায়ে হাটার ফুটপাতের ওপরে নির্মিত সেটুকু ভেঙ্গে ফেলছে। আর সেটা ঘিরেই উৎসুক জনতার ভিড়। একজনের কাছে জানতে চাইলাম এখানে কোনো দূর্ঘটনা ঘটেছে কিনা। সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো হয়তো, তারপর আবার ভাঙচুরের দৃশ্য দেখতে থাকলো মনোযোগ দিয়ে। প্রায় ৬০/৭০ জন মানুষের জটলা, কেউ কেউ ভাংচুর দেখছে, অনেকে নিজেরা আলাদা জটলা করে নানা বিষয়ে কথা বলছে। আবার অনেকেই ফিস ফিসিয়ে কি যেনো বলাবলি করছে। একটা জটলার দিকে এগিয়ে গিয়ে আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইজান এখনে কি হয়েছে? কোনো দুর্ঘটনা? সে বললো- নারে ভাই, ফুটপাতের ওপর মার্কেট করছে, সিটি করপোরেশন তাই ভেঙ্গে দিচ্ছে। পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন এতোদিনতো বলার কেউ ছিলো না। যাই বলেন ভাই, নতুন মেয়র কিন্তু কাজের কাজ করতাছে। পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলেন, আমাগোর ঢাহা শহরে এমুন মেয়রই দরকার আছিলো এতদিন।
চারদিক থেকে ভেসে আসা কথাগুলো শুনছি আর ভাবছি। আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে অবৈধ দখলদারদের যেভাবে উচ্ছেদ করছেন, এর আগে কোনো মেয়র সেটা করেনি কিংবা পারেনি এটা সত্য। তবে অন্যান্য উচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় এখনকার ঘটনা অতি সাধারণই বলা চলে। কেননা বনানী কবরস্থানের পাশে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে অবৈধ দখলে থাকা বহুল আলোচিত বাড়ি ভেঙ্গে সরকারী জায়গা উদ্ধার করাতে শুধু নগরবাসী নয় পুরো দেশবাসী যতটা না অবাক হয়েছে, তার চাইতে অনেক বেশি হতবাক হবার ঘটনা ছিলো সাতরাস্তার ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ।
আনিসুল হকের বর্নাঢ্য কর্মজীবনের যে গল্প শুনেছি সে সব কেবলই সিনেমার মত মনে হয়। কাজকে জীবনের অন্য সব কিছুর উর্ধ্বে নিয়ে যেতে পেরেছেন যিনি, এইরকম মানুষ বার বার জন্মায় না।
লেখক: সাংবাদিক
