24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০২৩

ট্রাম্পের ইসরায়েলপ্রীতির অন্তরালে

বিশেষ সংবাদ

Rabi Shankar Das
Rabi Shankar Dashttp://www.nagorik.com
Rabi Shankar Das is a Social Media Expert, Writer & Digital Journalist. He is working in Bangladesh's Entertainment & News Media industry since 2018. Currently, he is the "In-Charge Of Online" at Nagorik Television.
- Advertisement -

শুভ কিবরিয়া

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে  ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমেরিকান দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার কথাও  বলেছেন। এই ঘোষণার বিষয়ে জাতিসংঘ ,মুসলমানপ্রধান দেশ , আমেরিকার পশ্চিমা মিত্রদের আপত্তি মোটেই আমলে নেননি ট্রাম্প। আরববিশ্বসহ মুসলমান দেশগুলি এ বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে এবং কঠোর প্রতিক্রিয়াও ঘোষণা করেছে।

উল্লেখ্য ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর আমেরিকা প্রথম রাষ্ট্র যারা  মুসলমানদের পূণ্যভূমি হিসাবে পরিচিত জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিল।

অনেকের ধারণা ট্রাম্পের এই মুসলিমবিদ্বেষী নীতির ফলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট সমাধানের সকল চলমান  প্রচেষ্টা ভেস্তে যাবে। সারা পৃথিবীতে সন্ত্রাসবাদ নতুন করে মাথাচাড়া দেবে। সেই সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে আবার নতুন করে নিপীড়ন -নির্যাতন বাড়বে, যা আখেরে অস্ত্র উৎপাদনকারী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী দেশগুলোকেই বিশেষ সুবিধা দেবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ট্রাম্প কেনো এই সিদ্ধান্ত নিলেন? এ সময়েই বা কেনো সগর্বে  এই ঘোষণা দিলেন ? এটা কি তাঁর আচানক সিদ্বান্ত। নাকি ভেবে চিন্তেই এই কাজ করলেন তিনি!

আসলে ট্রাম্প তাঁর পুরনো নির্বাচনী কৌশলই প্রয়োগ করলেন ।

যেসব কারণে ট্রাম্প এই ঘোষণা দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাইছেন তা হল :-

এক.  ট্রাম্প জানেন আমেরিকানদের দৃষ্টি সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিতর্কিত বিষয় থেকে দ্রুত অন্যত্র সরানো দরকার।  রাশিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে আমেরিকার বিগত নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বিষয়ে দেশের ভেতরে ট্রাম্প এবং তার কাছের মানুষদের বিরুদ্ধে নানারকম তদন্ত চলছে  । আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে রাশিয়া এটা আমেরিকানদের ইগোতে আঘাত হানে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনের সময় রাশিয়ার সাথে হাত মিলিয়েছিলেন এই প্রচারণা এখন জোরসোরে চলছে আমেরিকা জুড়ে। সেটা ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্ষ্ট ‘ নীতির পরিপন্থি। ট্রাম্প চাইলেন তাই দ্রুত রাজনীতির আলোচনার মোড় ঘোরাতে। কৌশল হিসাবে বেছে নিলেন এমন একটি ঘোষণা যা ইসরায়েল এবং আমেরিকান জায়নিষ্ট লবিকে সন্তুষ্ট করে।

দুই.  ট্রাম্প জিতেছিলেন আমেরিকার আমজনতার ভোটে , ইসলামোফোবিয়ার জোরে। আমেরিকার রক্ষণশীল মুসলিমবিদ্বেষী ভোটারদের মন জয় করেছিলেন এই ঘোষণা দিয়ে যে, জিতলে তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেবেন। এবং মার্কিন দূতাবাস সেখানে স্থানান্তর করবেন। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে ট্রাম্প তাঁর জনপ্রিয়তা অক্ষুন্ন রাখতে চাইলেন।

তিন.  আমেরিকার শক্তিমান ইহুদী লবিকে সন্তুষ্ট করেই ভোটে জিতেছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় শক্তভাবে থাকতে ইহুদী লবির সন্তুষ্টি অব্যাহত রাখতে চান তিনি। আদর্শিকভাবেও এ লবির ভাবাদর্শে বিশ্বাসী ট্রাম্প। সেই ভাবাদর্শকে জিইয়ে তাঁর রাজনৈতিক প্রভাবকে বিলম্বিত করে অন্যসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনের সুযোগ বহাল রাখতেও এই ঘোষণা দিলেন তিনি।

চার.  আমেরিকার অর্থনীতি এখনও চাঙ্গা করতে পারেননি ট্রাম্প। তাই তাঁর দরকার একটা যুদ্ধ অথবা যুদ্ধযুদ্ধভাব। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান তাই ট্রাম্পের অন্যতম টার্গেট। ইসরায়েলকে সেকারণেই আরও কাছে টানা দরকার । ট্রাম্পের ইসরায়েলপ্রীতি এবং মুসলমানবিদ্বেষ দুটোই তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে দারুণতরভাবে প্রভাবিত করেছে। যদিও তার এই ঘোষনা গোটা আরবজগত এবং মুসলিম প্রধান দেশগুলোকে খুবই অখুশী করবে।

০২.

ট্রাম্প আসলে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চান। যুদ্ধবিগ্রহ লাগিয়ে আমেরিকা একদিকে অস্ত্র বেচতে চায়। আরেকদিকে আরবদেশ ও বিবদমান মুসলমান দেশগুলোর সম্পদ লুট করতে চায়। সিরিয়া , লিবিয়া , ইরাক সবর্ত্রই এই নীতি কাজে লাগিয়েছে আমেরিকান এষ্টাবলিশমেন্ট। ট্রাম্প তারই সম্প্রসারণ ঘটাতে চান। তিনি আসলে ব্যবসায়ীদের লোক। তাদের স্বার্থ নিশ্চিত করার নীতি প্রতিষ্ঠাই তার এই অতি-ইসরায়েলপ্রীতির পেছনের কারণ।

কিন্তু ট্রাম্পের এ নীতি দুনিয়াজোড়া বিপত্তি ঘটাতে পারে। বিশেষত আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় ইরান আক্রান্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে যুদ্ধের  বিভীষিকা । মনে রাখতে হবে এ অঞ্চলে ইসরায়েলের হাতে যেমন পারমাণবিক অস্ত্র আছে ইরানও তার ব্যাতিক্রম নয়। ইসরায়েল-ইরান সংঘাত দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ ঘটালে তা গোটা পৃথিবীকে উত্তাল করে তুলতে পারে। সম্ভাব্য এ বিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে অপরাপর বৃহত শক্তিবর্গ, বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া। সিরিয়ার পরিস্থিতি নজরে নিলে আমরা বলতে পারি ট্রাম্পের এ ঘোষণা আখেরে তাই কারও জন্যই সুখকর পরিণতি বয়ে আনবে না। এমনকি আমেরিকার জন্যও তা হিতে বিপরীত হতে পারে। ট্রাম্পের এ ঘোষণা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটালেও তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না। সেটা বিশ্বরাজনীতিতে আমেরিকার একক কর্তৃত্বের অবসান খর্ব করার সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে।

লেখক: সাংবাদিক
শুকি//মাহা
- Advertisement -

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বাধিক পঠিত