
মেয়র আনিসুল হক সাহেব অসম্ভব রকম অন দ্যা স্পট সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। এছাড়া শহরের যে মান্ধাতা আমলের পদ্ধতি, এর বাইরে গিয়ে উনি কাজ করার ব্যাপারে প্রচন্ড আগ্রহী ছিলেন। যে কারণে বহুকিছু অন দ্যা স্পট আমাদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিতেন।
যেমন সুবজ ঢাকা বানানোর কথা যখন চিন্তা করা হলো, তখন তিনি আমাদের স্থপতি সমাজের সাথে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ করেছেন। ঢাকা শহরে গাছপালা কিভাবে লাগানো যাবে, ফুটওভার ব্রিজের ওপরে কিভাবে গাছ লাগানো যাবে সেগুলো চিন্তা করেছেন।
শাহীন স্কুল এন্ড কলেজের সামনে ফুটওভার ব্রিজের গাছপালা লাগিয়ে উনি ঢাকা শহরে এ কাজ শুরু করলেন। এছাড়া ঢাকা শহরে কিছু কাজ তিনি প্রথমবারের মতো শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সাথে যে সব পুরনো আমলের লোক কাজ করতেন তারা নানা রকম বাধা দিয়েছেন, কিন্তু তাকে থামিয়ে রাখতে পারেন নাই।
ওনার কাজের গতিশীলতা ছিলো অন্যরকম। ঠিকাদারদের তাঁর কাছে আসতে হতো না বিলের জন্য। বিল ঠিকাদারের কাছে পৌছে যেতো।
নগরের মঙ্গলের জন্য যে জিনিসটা চেয়েছি, এবং সেই সাথে যে জিনিসটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি তিনি সাথে সাথে সেই জিনিস করেছেন। মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিলো অসাধারণ। দেশটাকে তিনি ভালোবাসতেন তীব্রভাবে। দেশের জন্য ভালো কিছু করার চিন্তা ছিলো তাঁর সব সময়।
রাত বারটার সময় তিনি আমাদের ফোন করে জানতে চাইতেন এ কাজটা করতে চাই আপনাদের সাহায্য লাগবে, আগামীকালকে কি আসতে পারবেন? নগরবাসীর ভালোর জন্য তিনি এতটাই নিবিষ্ট ছিলেন। আমার সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষন করেছে তাঁর যে গুনটি, উনি কোনো একটি জিনিস করতে চেয়েছেন, আমরা একটা মতামত দিয়েছি, যদি ওনাকে বোঝাতে পারতাম, এই কাজটি বাস্তবধর্মী, এটা করলে বেশি সুবিধা হবে, সেই কাজটি উনি সাথে সাথে করতেন।
এই যে বিলবোর্ড সরানোর বিষয়, আমরা খালি ওনাকে বলেছি, ঢাকা শহরে আমাদের আকাশ দেখার ব্যবস্থা করেন। উনি রাত দুইটা তিনটা পর্যন্ত জেগে এটা নিয়ে কাজ করেছেন। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিলবোর্ড সরানোর কাজটি করেছেন। জনস্বার্থে যেকোনো কাজ করার আগ্রহ ছিলো তাঁর অপরিসীম। এবং সেটা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা সেটার তদারকি তিনি নিশ্চিত করতেন।
এ বিষয়টি এ সমাজে খুবই বিরল। আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিরা শুধু অর্ডার দিয়ে কাজ শেষ করতে চান। কিন্তু উনি তা করতেন না।
জানার আগ্রহ ছিলো তার অসম্ভব রকম বেশি। ওনাকে কনভিন্স করতে পারলে যেকোনো ভাল কাজ নির্দ্বিধায় করতেন। ঢাকা শহরের যানজট দূর করার জন্য বিভিন্ন রুটে চার হাজার বাস নামানোর কাজটি প্রায় গুছিয়ে এনেছিলেন। যদিও এটি তার এখতিয়ারের মধ্যে ছিলো না, তবুও তিনি নগর পিতা হিসেবে এই কাজটি করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। উনি যেকোনো কাজ করতে গিয়ে বাধা এলে সেটা সমাধান করার প্রাণপন চেষ্টা করতেন।
এই মানসিকতা আমাদের মানুষের মধ্যে খুবই বিরল। ওনার অনুপস্থিতিতে আমরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হবো। তাঁর অবর্তমানে ঢাকাবাসী বিরাটভাবে বঞ্চিত হবে।
