
জয়ন্ত কর্মকার
চলে গেলেন একজন মানুষ। বহু পরিচয়ের ভীড়ে, বোধ করি বড় পরিচয় এটাই। মানবিক বোধসম্পন্ন গুণী একজন মানুষ। জাগতিক নিয়ম মেনেই হয়তো তাঁর এই প্রস্থান। কিন্তু মানতে কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। সবাই কোনও না কোনও দিন বিদায় নেন, সবাইকে চলে যেতেই হয়। তবুও, মনকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না কিছুতেই। ব্যক্তিগত ভালো লাগা থেকে কেবল নয়; বরং এই নগরীকে নিয়ে বেশি ভাবতো যে মানুষটি, তার জন্য সত্যি হৃদয় পুড়ছে। তিনি আনিসুল হক।
এই নগরীতে খুব বেশি দরকার ছিল তাঁকে। ঢাকাকে তিলোত্তমা নগরী বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন মানুষটি। এর আগে তাঁর মতো করে ভাবেন নি আর কেউ। কঠিন সেই যাত্রা পথে কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন, তার চেয়ে বড় কথা চেষ্টাটি ছিল। পরিবর্তন আনছিলেনও। তাইতো নাগরিকদের আস্থা ছিল মানুষটার প্রতি।
এত বছরে ঢাকায় যা সম্ভব হয়নি, সেই কাজটিই তিনি করেছেন। না করলেও কোনও ক্ষতি হতো না তাঁর। কিন্তু তিনি তো আনিসুল হক। অন্যদের মতো নন। তেঁজগাও ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে গুলশান, বনানী, মিরপুরসহ উত্তর সিটি করপোরেশনের বহু এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন দৃঢ় হস্তে। গুলশান-বনানী-বারিধারার চিত্র পাল্টে দিয়েছেন। উদ্যোগ নিয়েছিলেন পর্যায়ক্রমে বাকি এলাকাগুলোর পরিবর্তনে।
ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী নেতা, জনপ্রতিনিধি, উপস্থাপক; প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সফল তিনি। চিন্তা, কথাবার্তা সবকিছুতেই আলাদা অন্যের থেকে। ক্ষমতা কিংবা খ্যাতি কোনও কিছুরই কমতি নেই। অথচ তা সত্ত্বেও বিনয়ী, আর মানবিক একজন তিনি। একই সাথে অনেক বেশি আধুনিক। দুর্নীতি করেননি। লুটপাট করেননি। পরিবার, প্রতিষ্ঠান, নগরীর মানুষের প্রতি যত্নবান তিনি। তাইতো সবাই তাঁকে ভালোবাসেন।
একজন জনপ্রতিনিধির সবচেয়ে বড় যে দায়িত্ব থাকে, তা হচ্ছে জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকা। সে ক্ষেত্রে সবাইকে ছাড়িয়ে অনন্য উচ্চতায় তিনি। কারণ, মেয়র হওয়ার পর দায়িত্বের দু’ বছরেই তিনি জনগণের সামনে হাজির হয়েছিলেন ফেসবুক লাইভে। সরাসরি মানুষের দুর্ভোগের কথা শুনেছেন এবং সেই অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবেই অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন।
মেয়র থাকাকালীন স্বল্প সময়ে তিনি কি করেছেন, তা বলবার দরকার হয় না। সবাই জানেন। অনিয়ম আর প্রথার বাইরে গিয়ে, নিয়মের মধ্যেই অটল থেকে চাইলে কি করা যায়, তিনি দেখিয়েছেন। তিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়রের ইমেজটাই পাল্টে গেল। কারণ, আনিসুল হক দুর্নীতিবাজ, খুনী, লুটেরা, কিংবা জেলখাটা দাগী আসামী নয়। বরং সৎ, কর্মতৎপর, দায়িত্ববান, রুচিশীল, সংস্কৃতিবান, দেশপ্রেমিক। সর্বোপরি স্মার্ট একজন নেতা। তারুণ্যে ভরপুর আর অনেক বেশি আধুনিক। একজন জনপ্রতিনিধির এত গুণ; বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা একেবারেই অনুপস্থিত। তাইতো মানুষের আস্থা আর নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন তিনি। তাঁর জন্য প্রার্থনা করেন, আমার ঘরের মানুষটিও। এবং সেটা স্বেচ্ছায়।
কেবল স্মার্ট আর সুদর্শনই নন; ব্যক্তি আনিসুল হকের আশ্চর্য এক ক্ষমতা তাঁর ভুবনজয়ী হাসি। জড়তা নেই। ভয় নেই। সংকোচ নেই। সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকা মানুষটি, মৃত্যুর ঊর্ধ্বে যেতে পারলেন না ঠিকই, তবে আমি নিশ্চিত দেশবাসীর হৃদয়ে ঊর্ধ্ব স্থানেই থাকবেন তিনিই। প্রিয় মানুষ হয়ে।
লেখক: সংবাদকর্মী
