
প্রথমে টেলিভিশনের কথা বলি। নাগরিক টেলিভিশন কি আলাদা হবে সব টিভি চ্যানেলের থেকে? আসলে মানুষের নতুন চিন্তা ভাবনাগুলোই একে অপরের থেকে আলাদা করতে পারে। দেশের একমাত্র ফিচার টেলিভিশন নাগরিক। ফিচার বিষয়টির অর্থ একটু আপেক্ষিক, ফিচার সংবাদপত্রে ব্যবহৃত খু্বই প্রচলিত একটা শব্দ, যা কোন খবরকে কেন্দ্র করেই রচিত হয় এবং মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ করে বলা হয়। কোন ঘটনার গোড়া থেকে শেষ অব্দি বলার চেষ্টা করা হয়। নাগরিক টেলিভিশনে প্রচারিত হতে থাকবে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ফিচার, যা প্যাকেজ থেকে একটু আলাদা। দর্শক এতে শুধু খবরই পাবেনা তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র সমীকরণ মেলাতে পারবে। তুলে ধরা হবে দেশের সবকটি জেলার মানুষের কথা ও তাদের স্বপ্ন। ভিন্নতা থাকবে অনেক কিছুতেই।
একটা সময় বাংলাদেশের নাটক ভারতে বেশ জনপ্রিয় ছিল। কেননা গল্পটা আমাদের সত্যি ছিল, ছিল জীবনঘনিষ্ঠ। তবে বিভিন্ন কারনে নাটকের মান নেমে গেছে। তাই নাগরিক টিভি এই বিষয়ের উপর কড়া নজর রাখছে। কোন ভাবেই যাতে দর্শক বিরক্ত না হন তার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেমন একটি নাটক প্রচারের পর যদি অন্য কোন নাটক বা টেলিফিল্ম শুরু হয় সেক্ষেত্রে পূর্বের অভিনয় শিল্পীদের দেখা যাবেনা। নাগরিক টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটকের গল্পগুলোও অন্য কোন ধারাবাহিক নাটকের গল্পের সাথে মিলেমিশে যাবেনা, এ নিয়ে নাগরিক টেলিভিশন বেশ সচেতনতার সাথে কাজ করছে। ভালো অনুষ্ঠান দিয়েই ধীরে ধীরে দর্শকের মনে স্থান করে নিতে চায় নাগরিক টেলিভিশন। মুখ ফিরিয়ে নেয়া দর্শককে ফিরিয়ে আনতে চায় নাগরিক।
নাগরিক টেলিভিশন আসার পূর্ব পর্যন্ত নাগরিক ওয়েবসাইট (অনলাইন বিভাগ) দেশের মানুষের কাছে বিভিন্ন ধরনের তথ্যবহুল কন্টেন্ট দিয়ে আগেই পৌঁছে গেছে। আস্থার জায়গা তৈরী করতে পেরেছে। না .. অন্য কোন ওয়েব পোর্টালের সাথে চিরাচরিত প্রতিযোগীতায় বিশ্বাস করেনা নাগরিক। ভালো কন্টেন্ট বা সংবাদ দিয়েই পাঠক ও দর্শকের মনে স্থান পেতে চায়। আর সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে নাগরিক টেলিভিশন এবং অনলাইন বিভাগ।
বাংলাদেশের অনেক গুণীজন নিয়মিত লেখা, কলাম বা মতামত দিয়ে পাঠক কে তাদের ভাবনাগুলো অবহিত করেন । স্থানীয়, জাতীয় সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদগুলো পরিবেশন করা হয়। করা হয় আমেরিকা, ইউরোপ, ইসরাইল-প্যালেস্টাইন, অথবা ভারতবর্ষের ভবিষ্যত রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ; কিন্তু তা সাধারন মানুষের বোধগম্যতার মাপকাঠি ধরেই। ফলে আন্তর্জাতিক খবরগুলোর প্রতি পাঠকের আগ্রহ জন্মায় সহজ ভাবে বুঝতে পারার কারনে।
এখানে দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিয়ে রীতিমত গবেষণা করে লেখা প্রকাশ করা হয়। তাইতো জব্বারের বলী খেলা বা পুতুল নাচের ইতিকথা অথবা ডলফিন নিয়ে লেখা আমাদের ইরাবতীরা কোথায় যাবে এমন তথ্যবহুল কলাম পাওয়া যায়। এছাড়া বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সমস্যা রোহিঙ্গা নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে খবর ও প্রকাশ করা হয়েছে। কলামগুলো পড়ে পাঠক জানতে পেরেছে বাংলাদেশের কুটনৈতিক বিজয়ের কথা। সামাজিক সমস্যা ও বৈষম্য নিয়েও বিভিন্ন স্বাদের লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের জানা অজানা ইতিহাস পর্ব আকারে প্রকাশিত হয়েছে। নাগরিক তার সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনাতামূলক পোস্ট দিয়ে থাকে। বিশেষ দিবসের আয়োজনটাও বর্ণাঢ্য থাকে। তখন নাগরিকের ওয়েবসাইটাও বর্নিল দেখায়। মনস্তাত্বিক চিন্তা করে ছবি ও টেক্সটগুলোকে ওয়েবে সাজান হয় যাতে পাঠকের চোখ প্রশান্তি নিয়ে সবখবর গুলো পড়তে পারে।
নতুন প্রজন্মের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইডিয়া নিয়ে নাগরিক ওয়েবসাইটে বেশকিছু বিভাগ আছে যেমন, লাইফ স্টাইল, ক্যারিয়ার, খেলা, বিনোদন প্রভৃতি। আছে প্রযুক্তি-পরিবেশ ও বিচিত্র বিশ্ব, যেখানে প্রযুক্তির সর্বশেষ খবরটা দিতে ভুল করেনা নাগরিক ওয়েবসাইট । যতটুকু জানা যায়, নাগরিক টেলিভিশনে প্রচারিত প্রায় সকল অনুষ্ঠানগুলোই আপলোড করে দর্শকের জন্য রাখা হবে। যাতে যেকোন সময় দর্শক তার পছন্দের অনুষ্ঠানটি দেখে নিতে পারে। আরো অনেকগুলো বিভাগ বিবেচনাধীন। শিশুদের জন্যও থাকবে বিশেষ বিশেষ আয়োজন। নতুন প্রজম্নের জন্য তাদের উপযোগী শব্দ ও ভাষার প্রয়োগ করে বিভিন্ন ফিচার করা করা হবে। ব্যবসায়ী মনোভাব নিয়ে নাগরিক ওয়েবসাইটে কোন লেখা প্রকাশিত হয়না। এমনকি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবার জন্য কোন ভালগার সংবাদ প্রকাশ করা হয়না। কেননা সেগুলো আমাদের সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক।
জননন্দিত নগরপিতা আনিসুল হককে নিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে পাবলিক হিট বাড়াতে চেয়েছে, কিন্তু সকল বিভ্রান্তি দূর করে সঠিক তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই। মুখপাত্র হিসেবে ছিলেন নাগরিক টেলিভিশনের সিইও আব্দুন নূর তুষার। তখন তিনি আনিসুল হকের সহধর্মীনী রুবানা হক (মোহাম্মদী গ্রুপ ও নাগরিক টেলিভিশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর) এর কাছ থেকে অবগত হয়ে দেশের মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়েছেন। দেশের সমস্ত সংবাদ মাধ্যমগুলো তাঁর কাছ থেকেই সঠিক সংবাদ পেতেন এবং নাগরিক ওয়েবসাইটের সংবাদগুলো দেশের মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে শতভাগ। এছাড়া নাগরিক টেলিভিশনের সম্প্রচার বিভাগ সর্বপ্রথম লাইভ করে মেয়র আনিসুল হকের জানাযার নামাজের অনুষ্ঠান, যার কল্যানেই পুরো দেশবাসী প্রতিটি টিভি চ্যানেলে তা সরাসরি দেখার সুযোগ পায়।
মেয়র আনিসুল হকের স্বপ্নগুলো নাগরিক কর্মীদের মাধ্যমে একটু একটু করে বাস্তবায়িত হোক। নাগরিকদের নিয়েই নাগরিক টেলিভিশনের সকল ভাবনা চিন্তা। পাঠক ও দর্শকের একটুখানি ভালোবাসা পেলেই নাগরিক টেলিভিশনের সকল কর্মীর প্রচেষ্টা সার্থক হবে। তৈরী হবে নাগরিকের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক। শুভ হোক পথচলা।
তাশা/মাও
