
কোন পরিচয়টা আগে দিই ? বুঝতে পারছি না। একজন মানুষ, এই পরিচয় দিয়েই শুরু করি।
আধুনিক মানুষ। পরিশ্রমী মানুষ। মানবিক মানুষ। সফল ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের নেতা। একজন জনপ্রতিনিধি।
না, তাঁর পরিচয়টা তাও দেওয়া হলো না। আধুনিক, পরিশ্রমী, মানবিক, ব্যবসায়ী তারপর সর্বশেষ জনপ্রতিনিধি, এসব কিছুকে ছাপিয়ে যে মানুষকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ চেনেন, ঘরের মা-বাবা ভাই-ভাবি, বোন-দুলাভাই, ভাই-বোনরা চেনেন, পরিবারের গল্পে যে মানুষ আলোচিত হন, যাঁকে নিয়ে ভাবেন কোনো মেধাবী তরুণ বা তরুণী সেই মানুষটা হচ্ছেন সফল, রুচিশীল, প্রজ্ঞাবান, চৌকশ একজন উপস্থাপক মানুষ, আনিসুল হক।
বাংলাদেশের মানুষ যাঁর কথা শোনেন মন্ত্রমুগ্ধের মত। যাঁর বুদ্ধিদীপ্ত চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে পলক ফেলতে পারেন না, অপলক শোনেন জীবনের নিগূঢ় সত্য কথা কতটা প্রাণবন্তভাবে বলতে পারেন তিনি, তা শুনতে শুনতে কখনো ক্লান্তি লাগে না তাদের। যতবার শোনেন মনে হয়, এই বুঝি নতুন করে শোনা হলো।
মানুষকে তার জীবনের প্রতি, সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি, পরিবারের প্রতি এবং নিজের প্রতি যতœবান হতে কিভাবে উদ্বুদ্ধ করা যায় সেই যাদু তিনি জানেন। আর জানেন বলেই মানুষকে উৎসাহ যোগাতে, অনুপ্রেরণা দিতে জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোকে উপস্থাপন করেন তাঁর যুক্তি দিয়ে, রস দিয়ে, আবেগ দিয়ে। এমন সব বিষয়ের সম্মিলনে তিনি যা বলতে চান তা আমাদের মধ্যবিত্তের জীবনকে নাড়া না দিয়ে কী পারে? অকপটে তিনি বলতে পারেন নিজের জীবনের বাস্তব ঘটনা, যা বলতে তাঁর বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ হয় না, নির্দি¦ধায় বলে যান তাঁর আজকে সফলতার পথটা কোনো অবস্থায় কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। বলতে বলতে ক্লান্ত হন না, বলেই যান। আর এই বলার ভেতর দিয়ে তিনি আমাদের তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহ দেবার কাজটাই মুলত করে থাকেন। তিনি হতাশার ছিটেফোঁটা অন্ধকার যাতে তরুণদের এগিয়ে যাবার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য অনর্গল বলে যান সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার মত অনুপ্রেরণামুলক সত্য ঘটনা। জীবনকে প্রতিমুহুর্তে আনন্দের ভেতর দিয়ে, অধ্যাবসায়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করার কথাই প্রতিধ্বনিত হয় তাঁর কথায়। কিন্তু সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথাটা বারবার স্মরণ করিয়ে দেন ঠিকই। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা তৈরির বিষয়টিও বলতে ভুলে যান না।
একজন সফল উপস্থাপকের এসব গুণাবলীর পরে আর কিছু থাকা দরকার পড়ে না। তারপরও তিনি যেখানেই যখন তাঁর উপস্থিতি জানান দিয়েছেন, সেখানেই প্রমাণ দিয়েছেন তিনি আন্তরিকতার সাথেই সেই দায়িত্বটুকু পালন করেছেন। কোনো প্রকার কৃত্রিমতার ছাপ রাখেন নি। ব্যবসা ক্ষেত্রেই হোক বা ব্যবসায়ীদের সংগঠন হোক, সর্বশেষ জনপ্রতিনিধি, কোনোখানেই এক ইঞ্চি পরিমানও নীতি-আদর্শের বাইরে যান নি।
তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হিসেব কিতাবে নেই কোনো দুর্নাম, ঋণখেলাপীর বদনাম নেই। কর্মীরা তাঁকে ভালোবাসেন, কারণ তিনি মিশে যেতে পারেন সাধারণ মানুষের মতই।
ঢাকা উত্তরের মেয়র হবার পর তিনি নতুন রূপে নিজেকে উপস্থাপন করলেন মানুষের কাছে। ঢাকাকে তাঁর স্বপ্নের মত সাজাতে চেয়েছেন। কাজ শুরু হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। অবৈধ দখলদারদের থেকে মুক্ত করার প্রয়াসে এগিয়ে এলেন রাজপথে। শত বাধা বিপত্তিতে পাত্তা না দিয়ে দৃপ্ত পায়ে চললেন তেজগাঁয়ের ট্রাক স্ট্যান্ড মুক্ত করতে। গুলশান বনানীর বহু অবৈধ জায়গা মুক্ত করে ফেললেন মেয়র হবার পরপরই। বনানীতে ৫০ বছর ধরে স্বাধীনতাবিরোধী একজনের উত্তরাধীকারীদের দখলে থাকা ১০ কাঠা জায়গাও ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন বুলডোজার চালিয়ে।
তিনি যা স্বপ্ন দেখেন তা অন্যকে দেখাতেও পছন্দ করেন। ঢাকাকে অন্যরূপে দেখার স্বপ্নে বিভোর তিনি। অনেক কাজ তাঁর এখনো বাকি।
তিনি বর্তমানে লন্ডনে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকের পরামর্শেই তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর, তাঁর জন্মদিন। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর জন্য দোয়া করছেন, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন, ইনশাল্লাহ।
তাঁর স্বপ্নের ঢাকার অনেক ক্যানভাসে রঙ দেয়া বাকি এখনো। বাকি কাজটা এসে শেষ করবেন তিনি। আসুন, এই দোয়াই করি, আজ তাঁর জন্মদিনে।
লেখক: ছড়াকার ও সাংবাদিক।
