24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০২৩

বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়

বিশেষ সংবাদ

Rabi Shankar Das
Rabi Shankar Dashttp://www.nagorik.com
Rabi Shankar Das is a Social Media Expert, Writer & Digital Journalist. He is working in Bangladesh's Entertainment & News Media industry since 2018. Currently, he is the "In-Charge Of Online" at Nagorik Television.
- Advertisement -

শুভ কিবরিয়া

টেলিভিশনের উপস্থাপনা তাঁকে দর্শকপ্রিয় করে তুলেছিল। পেশা হিসাবে ব্যবসাকে বেছে নিয়েছিলেন। সব জায়গাতেই তাঁর আকাশছোঁয়া সাফল্য ছিল। সার্ক চেম্বারের সভাপতি হিসাবে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী সমাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিকতর গুণপনার সাথে। এগুলো তাঁর বহিরাংগের সাফল্য। অন্তরে তিনি ছিলেন লক্ষ্যভেদী। যখন যেটাকে কাজ ভেবেছেন, নিমগ্ন নিবিষ্টতায় তাকেই আরাধ্য জেনে মনপ্রাণ ঢেলেছেন। তার প্রমাণ মেলে মাত্র দুবছরের মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালনে। যেকোনো কাজ করার আগে সেই বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান আহরণ, বিশেষ মানুষদের পরামর্শ নেয়া, তরুণদের ভাবনা জেনে নেয়া ছিল তাঁর মজ্জাগত অভ্যেস।

‘সমস্য চিহ্নিত, এবার সমাধানযাত্রা’– এ বিষয়টি আক্ষরিক অর্থে শ্লোগান হিসাবে নয় , বাস্তবিক অর্থেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে , ঢাকা মহানগরীর মেয়রের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের মেয়র হিসাবে আনিসুল হকের বড় সাফল্য তিনি এই নগরীর অন্যতম‘ মেয়র’ যিনি সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। তাঁর হাতে কোন যাদুর কাঠি ছিল না। এই দেশের প্রচলিত আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর উপরেই ভরসা করতে হয়েছে তাঁকে। বিস্তর বাধা ছিল ভেতরে ও বাইরে , সর্বত্রই। কোন বাধাকেই তিনি মানতে চাননি। অচলায়তনের পাহাড় ভাংতে তাই তিনি ভেতরে ও বাইরে ভীষণতর লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই বাড়তি চাপ তার রোগের কতটা কারণ সেটা হয়তো একদিন জানা যাবে অথবা কখনই জানা যাবে না। তাঁর যারা শুভাকাঙ্ক্ষী , তারা তাঁকে এই চাপ থেকে নির্ভার থাকতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়র হিসাবে জনসেবার যে ব্রত তাঁর ওপর বর্তেছিল, তাকে তিনি মনপ্রাণ ঢেলে অন্তরের ভেতর ঠাঁই দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন লড়াইটা চালু রাখলে সুন্দর ঢাকা , বাসযোগ্য ঢাকা নিরাপদ ঢাকা তৈরি করা অসম্ভব কিছু না। তাই অসম্ভবের পানে বৈচিত্র্যময় স্বপ্ন নিয়ে অতি পরিশ্রমের মনোযোগী পথেই তিনি হেঁটেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল মানুষের ভালবাসা আর অনুপ্রেরণা নিয়ে এই দুস্তর , দুর্লঙ্ঘ বাধা পেরুনো যাবে। তাই স্বপ্ন নিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার কাজে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন , লক্ষ্যস্থির নিশানায়।তাঁকে যারা পছন্দ করতেন তারা তো বটেই যারা তাঁকে অপছন্দও করতেন , তারা তার এ লক্ষ্যভেদী লড়াইটাকে সম্ভ্রমের চোখেই দেখতেন।

জনমানুষ , ব্রাত্যজন আমরা যাকে আমজনতা বলি , যারা অতটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শুধু মানুষের ভুলত্রুটি খুঁজতে উৎসাহী নন, তারা মেয়র আনিসুল হকের মধ্যে প্রকৃত কাজপ্রেমি , সাহসি , জনদরদি , পরার্থে উৎসর্গিকৃত সরল মানুষটিকেই খুঁজে পেয়েছিলেন। ভালবেসেছিলেন মনপ্রাণ দিয়েই। রাজনৈতিক একটা প্রতীকে ভর করে তিনি মেয়র হয়েছিলেন বটে, কিন্তু জনমানুষ সেসব পরিচয়ের বাইরে যেয়ে তাঁকে আপন করেছিলেন হৃদয় দিয়েই। মানুষের চোখে কাজের এই স্বীকৃতি আনিসুল হককে আরও বেগবান করেছিল তাঁর লক্ষ্য অর্জনে। জীবনের শেষ অধ্যায়ে প্রকাশ্যে জনসেবার এই কাজটি তাই আন্তরিকভাবেই  নিয়েছিলেন তিনি।

বহুমাত্রিক সাফল্য ছিল তাঁর জীবনে। গার্মেন্ট সেক্টরের নেতা হিসাবে , উদ্যোক্তা হিসাবে তাঁর সাফল্য খালি চোখে বড় করেই দেখা যায়। পাবলিক ফিগার হিসাবে তাঁর উপস্থিতি সবার নজর কেড়েছে। কিন্তু জনসেবক হিসাবে জীবনের শেষ অধ্যায়ে তিনি ছিলেন আপসহীন, জ্যোতির্ময় সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। মানুষ তাই মেয়র আনিসুল হককে বহুদিন মনে রাখবে। ভবিষ্যতেও মানুষ মনে মনে চাইবে এমন একজন মানুষের হাতে ঢাকা মহানগরী বাসযোগ্য করার দায়িত্ব পড়ুক,  যিনি আনিসুল হকের মতো করেই মমতাময় হৃদয়ে এই শহরের মানুষের নাগরিক দুঃখ লাঘবে ব্রতী হবেন। যারা রাজনৈতিক কারণে তাঁকে নিজেদের ঘরাণার ভাবতে স্বত্বিবোধ করতেন না , সেই নগরবাসীরাও আগামী দিনে মেয়রের মধ্যে আনিসুল হককে খুঁজে পেতে চাইবেন। আনিসুল হকের জীবনের সার্থকতা বোধ হয় সেখানেই।

মানুষের মৃত্যু অবধারিত। কারও পক্ষেই মৃত্যুকে এড়ানো সম্ভব নয়। আনিসুল হকও তার বাইরে নন। কিন্তু মানুষের হৃদয়েতাঁর মৃত্যু নেই। বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় হয়েই মানুষের হৃদয়ে তার স্মৃতি ভালবাসায় ভাস্বর  থাকবে।

লেখক: সাংবাদিক

- Advertisement -

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বাধিক পঠিত