25 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০২৩

বিদায় আনিসুল হক

বিশেষ সংবাদ

Rabi Shankar Das
Rabi Shankar Dashttp://www.nagorik.com
Rabi Shankar Das is a Social Media Expert, Writer & Digital Journalist. He is working in Bangladesh's Entertainment & News Media industry since 2018. Currently, he is the "In-Charge Of Online" at Nagorik Television.
- Advertisement -

মৃত্যুই কী  শেষ কথা? মৃত্যুর পর কি এই জীবনের কোনো স্মৃতি থাকে।   সেসব সাক্ষাত জানার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে কি বেঁচে থাকে?   মানুষের কর্মই কি তাহলে তার  মৃত্যুর পরের যে অনন্ত জীবন সেই জীবনের পাথেয় হয়ে থাকে? কি জানি! আানিসুল হক (১৯৫২-২০১৭) এই জগতের সকল মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন মৃত্যুর দেশে।  গোটা দেশের আমজনতা তাঁর শোকে মুহ্যমান। গুজবের গজবও এখন আর তাঁকে ছুতে পারবে না।

যে প্রিয় নগরকে ভালবেসে এই নগরীর দুঃখ ঘোচাতে চেয়েছিলেন সেই নগরীর মাটিতেই শেষ আশ্রয় নিলেন প্রিয় মেয়র আনিসুল হক।

এই নগরীর বিস্তর দুঃখ , মানুষ ভেবেছে কখনই এই দুঃখ লাঘব করার মতো আর কাউকে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আনিসুল হক সেই দুঃখদিন ঘোচাবার প্রত্যয় নিয়ে মানুষের পাশে দাড়িয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় সমর্থনে এক অনির্বাণ উদ্যমে দিনভর কাজ করে আনিসুল হক প্রমাণ করেছিলেন হাজারো সমস্যা আক্রান্ত এই মহানগরবাসির নিত্য নাগরিক  দুঃখদিন দূর করা সম্ভব।  আস্তে আস্তে সেসব কাজের নজিরও তিনি রাখছিলেন। গাবতলীর বাসস্ট্যান্ডের বিখ্যাত যানজট তার প্রত্যয়ী উদ্যোগে দূর হয়েছে। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের সেই যানজংগল যে এমন সুন্দর জনযোগাযোগের সুবিধা দিতে পারে তা প্রমাণ করেছেন আনিসুল হক। এই কাজ সহজ ছিল না। অনেক বৈরীতা ছিল , হুমকি ছিল , বাধা ছিল , কিন্তু দমেন নাই মেয়র আনিসুল হক। জনগণের কল্যাণভাবনায় সকল প্রতিকূলতা  তিনি মোকাবিলা করেছিলেন শক্তহাতেই। ঢাকা নগরের ভরা দুঃখ ছিল এখানকার  দুর্যোগপীড়িত গণপরিবহন । সেটি নিয়ে কাজ করছিলেন আনিসুল হক। প্রায় চারহাজার বাস নামাতে চেয়েছিলেন , নতুন মডেলে কোম্পানি বানিয়ে। এই কাজে আন্তর্জাতিক সংস্থা , বাংলাদেশ ব্যাংককে যুক্ত করে  মাঠে নেমেছিলেন তিনি। সেই জটিল , প্রায় অসম্ভব কাজটি শেষ হতে পারল না।

বিধাতার এক অদ্ভুত খেলা। মেয়র আনিসুল হক তার আরাধ্য কাজ শেষ করতে পারলেন না। তার নিজস্ব মেয়াদের বড় অংশ অপূর্ণ রেখেই তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিদায় নিলেন।

কিন্তু আমরা কি তার আরাধ্য অসমাপ্ত কাজ শেষ করার সুযোগ তৈরী করতে পারবো। সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আবার এক অর্থে সেটা একটা চ্যালেঞ্জও বটে। আনিসুল হক আমাদের সবার জন্য সেই চ্যালেঞ্জ রেখে গেলেন।

 

দুই.

আনিসুল হকের মেন্টর ছিলেন বিশ্বসাহিত্যকেন্দের প্রতিষ্ঠাতা আবদুুল্লাহ আবু সায়ীদ । খুব কাছ থেকে বহুবছর ধরে আনিসুল হককে জানতেন তিনি। লেখাটা শেষ করতে চাই সায়ীদ স্যারের একটা লেখা থেকে।  সায়ীদ স্যার  তাঁর ‘আমার উপস্থাপক জীবন’ বইয়ে অনেকদিন আগে আনিসুল হকের টিভিজীবন নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেছেন।

সায়ীদ স্যার  লিখেছেন , ‘আমি টিভি ছাড়ার পর বিটিভিতে যিনি দর্শকনন্দিত ও প্রাণবন্ত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান উপহার দেন তিনি প্রিয়দর্শন উপস্থাপক আনিসুল হক। স্বতঃস্ফুর্র্ত ক্ষিপ্র ও আবেগময় ব্যাক্তিতের অধিকারি আনিসুল হকের অনুষ্ঠান যেমন ছিল জমকালো তেমনই প্রাণবন্ত ।  সংস্কৃতিমনা রুচিশীল দর্শকের কাছে এগুলোর ব্যাপক আদর ছিল। তিনি উপস্থাপনা করেছিলেন মাঝারি- মেয়াদি  তিনটি সিরিজ :   ‘ অন্তরালে’ ও ‘এখনই’ ও ‘ বলা না বলা ’। তিন অনুষ্ঠানই ছিল অনবদ্য। আমার ধারণা তাঁর উপস্থাপক- জীবন কিছুটা দীর্ঘ হলে  তা উপস্থাপক হিসাবে তাঁর ভাবমূর্তিকে আরও পোক্ত করত। পরবর্তী তাঁর গোটাকয়েক ঈদের অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সপ্রতিভ ও প্রতিভাবান আনিসুল হক সফল উপস্থাপনা করলেও একসময় এ জগত থেকে বিদায় নিয়ে  ব্যবসা -জগতে ডুবে যান। বর্তমানে তিনি দেশের অন্যতম ব্যবসাসফল ব্যাক্তিত্বই কেবল নন , বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প সংঘের নেতাও।  এখন টিভি সংবাদে মাঝে মধ্যে তাঁর যেসব ছোটখাটো সাক্ষাতকার চোখে পড়ে সেখানেও তাঁর অনেক আগের সেই ক্ষিপ্র ও চৌকস উপস্থাপককে ব্যাক্তিত্বসম্পন্নভাবে ঝলকে উঠতে দেখতে পাই।’

শুভ কিবরিয়া

 

- Advertisement -

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বাধিক পঠিত