
একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) বনী ইসরায়েলের ৪জনের কথা বললেন। তারা দীর্ঘ ৮০বছর ধরে এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করেছেন যে, চোখের পলক পরিমাণ সময় আল্লাহর নাফরমানি করেননি।
এ কথাগুলো শুনে রাসূল (সা.) এর সাহাবীরা আশ্চর্যান্বিত হলেন। তখন জিবরাইল (আ.) আসলেন ও বললেন, আপনার উম্মত ৮০বছরের ইবাদতের কথা শুনে বিস্মিত হচ্ছে, তাই আল্লাহ তাআলা এর চেয়েও ভাল জিনিস আপনাদের জন্য নাযিল করেছেন।
তাহলো, সূরা কদর। যাতে বলা হয়েছে, লাইলাতুল কদরে মাত্র ১টি রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ সুসংবাদ শুনে রাসূলুল্লাহ (সা). ও সাহাবীরা খুশি হন। (ইবনে কাছীর, ৪/৫৩১)
আরেকটি বর্ণনায় আছে, নবী (সা.) বনী ইসরায়েলের ১জন মুজাহিদের কথা বললেন। যে ১হাজার মাস আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেন। কথাটি শুনে সাহাবীরা বিস্মিত হলেন।
তখন আল্লাহ তাআলা সূরা কদর নাযিল করে বলেন, কদরের ইবাদত (ওদের) হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি। (ইবনে কাছীর, ৪/৫৩১)
রাসূলুল্লাহ (সা.) কে স্বপ্নে পূর্বের লোকদের আয়ু দেখান হলো। তিনি বুঝলেন, তার উম্মতের আয়ু কম। সারাজীবন কাজ করলেও ওদের আমলের নিকট পৌঁছাতে পারবে না। তখন আল্লাহ তাআলা লাইলাতুল কদর দান করেন যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (মুয়াত্তায়ে মালিক, ৯৯)
লাইলাতুল কদরে করণীয় –
* নির্ধারিত ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাহ, নফল ও মুস্তাহাব কাজগুলো করতে হবে।
* মাগরিব ও এশার সলাত জামাআতে আদায় করতে হবে।
* তারাবীহ ও বিতির সলাত আদায় করতে হবে।
* বেশি করে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে।
* মহান আল্লাহ’র যিকির, তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ করতে হবে নীরবে।
* বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তেগফার করতে হবে। অপরাধ স্বীকার করতে হবে।
* গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
* আল্লাহ তাআলা’র কাছে কান্নাকাটি করতে হবে।
* বেশি বেশি দুআ করতে হবে।
* এ দুআটিও বাদ দেয়া যাবে না- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওবুন তুহিব্বুল আফওফা ফাআফু আন্নি’।
* বিশেষ করে করোনা থেকে বিশ্বমানবতার মুক্তির জন্য দুআ করতে হবে।
* পরিবার পরিজনকে ইবাদতের জন্য জাগিয়ে দিতে হবে।
* সব ইবাদত ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে করতে হবে।
আল্লামা আইনি বলেন, লাইলাতুল কদর এমন রাত যাতে সব ব্যাপারের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। তার চূড়ান্ত রূপ দান করা হয় এবং এক বছরের জন্য আল্লাহ তাআলা এ রাতে সব বিধান ও মর্যাদার ফায়সালা করে দেন।
এ রাত যেমন দান তেমনি এ রাতে আমল করাও আল্লাহর প্রদত্ত তাওফিক দানের দ্বারাই সম্ভব হয়। ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’ (সূরা কদর, ৩)
‘আমি কুরআন নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে (লাইলাতুল কদরে)’ (সূরা দুখান, ৩)
‘যে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় কদরের রাতে নামাযে দাঁড়ায় তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। ‘ (সহীহ বুখারী)
লাইলাতুল কদর তালাশ করতে হবে রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে।আল্লাহ সহায়, আমীন।
মাসুম বিল্লাহ বিন রেজা গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, আলেম, প্রভাষক, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত
