24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০২৩

২০১৮ : বিবাদ বাড়তে পারে…বাধতে পারে যুদ্ধ

বিশেষ সংবাদ

Rabi Shankar Das
Rabi Shankar Dashttp://www.nagorik.com
Rabi Shankar Das is a Social Media Expert, Writer & Digital Journalist. He is working in Bangladesh's Entertainment & News Media industry since 2018. Currently, he is the "In-Charge Of Online" at Nagorik Television.
- Advertisement -

শুভ কিবরিয়া

লাগবে লাগবে করেও যুদ্ধ লাগেনি বড় আকারে ২০১৭ সালে। আওয়াজ ছিল বিস্তর। বিশেষ করে আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প আর উত্তর কোরিয়ার কিম জন উন যেভাবে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন তাতে আশংকা ছিল একটা বাস্তব যুদ্ধের। সেটা হয়নি বটে কিন্তু সামনে যে হবে না সেই আশংকাটা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কেননা নিজ দেশের জনগণ আর আন্তর্জাতিক বিশ্বে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শক্তি প্রদর্শনের জন্য একটা যুদ্ধ খুব জরুরি। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধ বাধাতে চেয়েছেন ট্রাম্প। ইজরায়েলের রাজধানী হিসাবে জেরুজালেমে আমেরিকার দূতাবাস স্থানান্তর করেছেন তিনি গোটা মুসলিম দুনিয়া ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের বাধা ঠেলেই। ইরান আর সৌদিকে মুখোমুখি করে প্রক্সি ওয়ারের সম্ভাবনা তৈরী করলেও সেখানেও খুব একটা সফল হয়নি তাঁর রণকৌশল। কেননা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে জটিল করে দিয়েছে রাশিয়া। ইরান ও তুরস্কের নতুন মিত্র হিসাবে এগিয়ে এসে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে পশ্চিমাদের বাড়াভাতে ছাই দিয়েছে রাশিয়া সফলভাবেই। চীনও নানাভাবে মাথা ঢুকিয়ে আমেরিকা ও তাঁর পশ্চিমা মিত্রদের অনেক পরিকল্পনায় বাধ সেধেছে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দুনিয়ায়।

খোদ এশিয়াতেও আমেরিকার অনেক সাধকে দুঃসাধ্য করে দিচ্ছে চীন ,রাশিয়া। বাংলাদেশে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের   মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে সেখানকার কর্তৃপক্ষকে যেভাবে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা দুনিয়া চাপ তৈরী করতে চেয়েছিল তার গতিমুখ বদলে দিয়েছে রাশিয়া, চীন সঙ্গে ভারত। একটা টান টান উত্তেজনায় পানি ঢেলে দুনিয়ার বহু জায়গায় আমেরিকার রাজনৈতিক-কূটনৈতিক আগ্রাসনের গতিমুখ পরিবর্তন করতে বাধ্য করছে চীন ও রাশিয়া। নতুন সামরিক রণকৌশলে তাই আমেরিকা এই দুই দেশকে সাক্ষাত শত্রু হিসাবেই চিহ্নিত করেছে। ২০১৭ জুড়েই পৃথিবীর বহু জায়গায় সামরিক, বাণিজ্য, কূটনীতিতে একটা সাক্ষাত যুদ্ধ তাই লাগতে লাগতে লাগেনি।

কিন্তু ২০১৮ সালে কি সেই দমবন্ধ করা উত্তেজনা হালকা তালেই চলবে? আমেরিকার অর্থনীতির ঊর্ধ্বমুখী গতির জন্য যে একটা অস্ত্র বিক্রির খনি দরকার! যুদ্ধ ছাড়া তা মিলবেই বা কিভাবে?

দুই.

সারা বিশ্বজুড়ে শরণার্থির সংখ্যা বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে লিবিয়া, ইরাক, সিরিয়া জুড়ে গৃহযুদ্ধ  ইউরোপের দেশগুলোতে নতুন অভিবাসিদের সংখ্যা বাড়িয়েছে। এ নিয়ে জেরবার গোটা পশ্চিমা দুনিয়া। এরমধ্যে হঠাৎ করে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত নির্যাতিত মানুষ বর্ডার মাড়িয়ে ঢুকতে শুরু করে বাংলাদেশে। গোটা পৃথিবী স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে বাংলাদেশ সরকার লাখ লাখ বিপন্ন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে আশ্রয় দিতে থাকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সারা বছর জুড়েই এই রোহিঙ্গা ইস্যু ছিলো আলোচনায়। কূটনৈতিকভাবে তো বটেই নানান সমীকরণের মধ্যেও শান্ত মাথায় উত্তপ্ত এই ইস্যুটিকে সামাল দেয় সরকার ঘরে ও বাইরে। বছর শেষে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও নিয়েছে মিয়ানমার, বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে। অনেকের আশংকা আছে এই উদ্যোগ লোক দেখানো এবং কাগুজে।

২০১৭ জুড়ে সরব রোহিঙ্গা ইস্যুর মোড় কোনদিকে ফেরে তা দেখার জন্য আঞ্চলিক আর আন্তর্জাতিক মহলের ভেতর-বাহির খেলায় চোখ রাখতে হবে ২০১৮-তে । বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব রাখতে পারে এই ঘটনা।

২০১৭ জুড়ে সরকার চাপে থেকেছে একের পর এক দুর্যোগে। হাওড়ের ঢল, পাহাড়ি ধস, উত্তরাঞ্চলের বন্যা, বজ্রপাতে প্রাণহানি, চিকনগুনিয়ার প্রকোপ সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে। এসব ঘটনার চাপ পড়েছে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ওপর। পিয়াঁজের দাম, চালের দাম, সবজির দাম নাকাল করেছে নিম্নআয়ের মানুষের জীবন। সরকার বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দামও বাড়িয়েছে। এসবে সরকার সমালোচিত হয়েছে তবে বিপন্ন হয়নি রাজনৈতিক কোন চাপে। এ বছর কোন বড় ভোট ছিল না তবে বছর শেষে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সেখানে সরকারি দল আশানুরুপ ফল পায়নি। তবে এসব ঘটনা সরকারকে কোন রাজনৈতিক চাপে ফেলেনি।

সারাবছর রাজনীতির পারদ ধীর লয়ে চলেছে বটে কিন্তু কোন উত্তাপ তৈরি করতে পারেনি। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, পদ্মাসেতু, রামপাল কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ বড় বড় বিদ্যুত কেন্দ্র, উড়ালসেতু, সড়ক আর  অবকাঠামো নির্মাণ করে সরকার তার উন্নয়ন কাজ চালিয়ে গেছে বিপুল বিক্রমে কোন বাধা ছাড়াই। না ছিল বিরোধী রাজনীতির চাপ না ছিল ভোটে জনগণের বিরূপতার চাপ। কিন্তু ২০১৮, উসকে দিতে পারে রাজনীতিতে বিবাদ আর বিপত্তির সলতে।

বছরের শুরুতেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন অনেক উত্তাপ তৈরি করতে পারে। ঢাকার প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মতো মানুষকে খুঁজতে চাইবে ঢাকাবাসি। মেয়র প্রার্থীদের জন্য সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনের পরেও পদে পদে এই মহানগরীর ভোটাররা প্রয়াত আনিসুল হকের কাজকে মডেল ধরে সম্ভাব্য নতুন মেয়রকে বিচার করতে চাইবে। সকল বাধা উৎরে ঢাকায় মেয়র পদে উপ-নির্বাচন যদি হয়ই তবে নতুন মেয়রকে এই বিবেচনা সবসময় মাথায় রাখতে হবে।

অন্যদিকে দুর্নীতির চলমান মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দন্ডিত হলে রাজনীতি এতো সহজ পথে নাও চলতে পারে। বিশেষ করে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে পানি ঘোলা হতে পারে বিস্তর, ২০১৮ সালেই।

তিন.

নির্বাচন সামনে এলে আন্দোলনের সুযোগ বাড়ে। সরকার নমনীয় থাকে। সরকারকে চাপে ফেলতে আন্দোলনকারিদের প্রতি বিরোধি দলগুলোর মমতা বাড়ে । সেই সুযোগ নেয় পেশাজীবি সংগঠনগুলো। তাদের নানারকম দাবিদাওয়া আদায় আর বঞ্চনার নিরাময় খুঁজতে মাঠে নামেন জোরেসোরে। ২০১৭-এর শেষে  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকরা বেতন-বৈষম্য নিরসনের দাবিতে, হাজার হাজার শিক্ষক কর্মচারি এমপিভুক্তির দাবিতে, জাতীয়করণকৃতদের নন-ক্যাডারে রাখতে সরকারি কলেজের শিক্ষকদের দাবিতে, লাখ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক জাতীয়করণের দাবিতে মেঠো আন্দোলন মাঠে নেমেছে। অনশন, আমরণ অনশনের ঘোষণা দেয়া এইসব আন্দোলন, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে জোরদার হয়ে উঠতে পারে ২০১৮ সাল জুড়ে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে অন্য শ্রমজীবিরা বেতনভাতা-পদোন্নতিসহ নানারকম সুবিধাদি বাড়াতে এই আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হতে পারে। সরকার কঠোর হলে এসব আন্দোলন থেকে প্রতিরোধ বাড়তে পারে। তা তৈরি করতে পারে নানারকম বিপন্নতা।

২০১৮ তাই বিবাদ তৈরি করতে পারে নানাভাবেই।

চার.

২০১৭ সালের শেষ দিনে এসে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরান। সরকার বিরোধি বিক্ষোভ শুধু সহিংসই হয়নি, প্রাণহানিও ঘটেছে সেখানে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক চাপের বিরুদ্ধে মানুষের উষ্মাই এই ক্ষোভের কারণ বলা হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের পক্ষে। অন্যদিকে সরকারের ভাষ্য হচ্ছে এটা বিদেশি এজেন্ট আর প্রতিবিপ্লবিদের কাজ। এই জনবিক্ষোভকে সমর্থন এবং সরকারি নিপীড়নকে দায়ী করে ইরানের ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে টুইট করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলে ইরান ইস্যু উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে ২০১৮ জুড়েই।

স্পেন থেকে আলাদা হয়ে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নটি অমীমাংসিত থাকে ২০১৭ সালে। নতুন বছরে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালোনিয়া আরও উত্তাল হয়ে উঠতে পারে, সেই সম্ভাবনাও কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কেননা সর্বশেষ স্থানীয় ভোটে স্বাধীনতাপন্থীরাই জিতে গেছে বিপুল ভোটে।

পাঁচ.

চীন তার ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচি নিয়ে এখন বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং এশিয়া -ইউরোপকে সড়ক-সমুদ্রপথে কানেক্ট করে অর্থনীতির নতুন জোয়ার আনতে চাইছেন চীনের নেতৃত্বে। অর্থনীতি জয়ের চীনের এই আকাংখাকে প্রতিদ্বন্দ্বিরা দেখছে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের আকাংখা হিসাবে। ফলে এই ইস্যুতে একটা বিবাদ গড়ে উঠতে পারে চীনের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে। ২০১৭ সালে দোকলাম সীমান্তে ভারত-চীনের মুখোমুখি সশস্ত্র অবস্থান তার একটা ছোট মহড়া ছিল মাত্র। এসব দ্বন্দ্ব, বড় বিবাদে রূপান্তরিত হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না নতুন বছরে।

 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
- Advertisement -

আরও পড়ুন

1 COMMENT

  1. মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার পেছনে এত কৌশল ছিল তা জানতে পারলাম আপনার তথ্য সমৃদ্ধ কলামটি পড়ে…। এমন ভাবেই বিভিন্ন গল্পের পেছনের গল্প জানতে চাই আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বাধিক পঠিত