
বয়সটা তার মাত্র ৪২। জনপ্রিয়তাও আকাশচুম্বি। কিন্তু, আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে চান না নিউজিল্যান্ডের জেসিন্ডা আরডার্ন। সবাইকে অবাক করে জানালেন, পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। বলেছেন, আর কিছুই দেয়ার নেই তার। অনেকে বলেন, দেশটির ইতিহাসের সেরা সরকারপ্রধান জেসিন্ডা।
২০০১ সালে রাজনীতি ও গণসম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক করেন জেসিন্ডা আরডার্ন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নীতি-নির্ধারণী উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তালিকাভুক্ত সংসদ সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে আসেন। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের ৪০তম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তখন থেকেই দেশটির লেবার পার্টির সভাপতির পদে আছেন তিনি।
মাত্র ৩৭ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জেসিন্ডা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কন্যাশিশুর জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। মেয়েকে কোলে নিয়ে যোগ দেন জাতিসংঘের অধিবেশনে। সরকারপ্রধানের পদে থাকা অবস্থায় সন্তানের জন্ম দেয়া দ্বিতীয় নারী তিনি। এর আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সন্তান জন্ম দেন।
এবার সবাইকে অবাক করে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেন দেশটির জনপ্রিয় এই প্রধানমন্ত্রী। এক সংবাদ সম্মেলনে অশ্রুভেজা চোখে জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি শেষ অফিস করবেন। সাড়ে পাঁচ বছর কঠিন সময় পার করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার আর দেয়ার কিছু নেই।
তিনি বলেন, এমন সিদ্ধান্তের জন্য সবাই কারণ খুঁজে বেড়াবে। রাজনীতিকরাও মানুষ। তারা যতটা পারে, যতদিন পারে, সবই দেয়। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসে। তার ক্ষেত্রেও এ সময় এসে গেছে। তাই তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন।
সাধারণ নির্বাচনের নতুন তারিখও জানিয়ে দিয়েছেন জেসিন্ডা আরডার্ন। ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি। তার কোনো উত্তরসূরিও নেই। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী গ্রান্ড রবার্টসনও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পরবর্তী লেবার নেতা হওয়ার দৌঁড়ে তিনি নামতে চান না।
জেসিন্ডার দল লেবার পার্টি দুই বছর আগে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। সম্প্রতি তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল পার্টি শক্ত অবস্থানে আছে। তবে জেসিন্ডার বিশ্বাস, আসন্ন নির্বাচনে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসবে।
চার বছর আগে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে নির্বিচার গুলি চালায় এক বন্দুকধারী। প্রাণ হারায় অর্ধশত মানুষ। এমন পরিস্থিতি একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কী করণীয়, তার জলন্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেন জেসিন্ডা আরডার্ন। পুরো দেশকে নিয়ে আসেন সংহতি আর একতার একক ছায়াতলে।
এরপরেই করোনা মহামারির ছোবল। যা সঙ্গে করে নিয়ে আসে অর্থনৈতিক মন্দা। এমন কঠিন সময়ে, জেসিন্ডা দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন সফলতার সঙ্গে।
চলতি বছর তার মেয়ে নেভের স্কুলজীবন শুরু হবে। এই সময় তিনি মেয়ের পাশে থাকার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। তাছাড়া, দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী ক্লার্ক গেফোর্ডকে এবার বিয়ে করার সময় হয়েছে বলে জানান কিউই প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন।
তানভীর জনি/ফই
