পশ্চিমা মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সম্পর্কটা ইদানিং শীতল যাচ্ছে। ‘আপনাদেরকে আমাদের দরকার নেই’ জাতীয় তপ্ত কথাও বলতে শোনা যাচ্ছে তাকে। কিন্তু দেশের ভেতরেই এর চেয়ে বড় সমস্যা রয়েছে এরদোগানের। কুর্দি সমস্যা, পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে দুই বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপল’স পার্টি ও পিপল’স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে তার বড় বিরোধ রয়েছে। নিজের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সঙ্গেও তার সমস্যা চলছে।
তার অতিসাম্প্রতিক সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছেন আঙ্কারার মেয়র মেলিহ গকচেক। সম্ভবত তার এই সমস্যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বা জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য ছোড়াছুড়ির চেয়েও বড়।
এরদোগান জানেন যে ২০১৯ এর নির্বাচনে তার দল খারাপ করলে তিনি ঝুঁকিতে পড়বেন। ওই নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হতে হলে তাকে ও তার দলকে ৫০ শতাংশের উপরে ভোট পেতে হবে। যেখানে ২০১৭র গণভোটে তার বিরুদ্ধে না ভোট দিয়েছে আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল ও আরও কয়েকটি বড় শহরবাসীরা। যদিও আঙ্কারার দীর্ঘদিনের মেয়র গকচেক ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তার কারণে
দলের কেন্দ্রের যথেষ্ট সমর্থন পেয়ে ২০১৯ সালে আবার বিজয়ী হবেন এমটাই ধারণা করা হচ্ছে।
এরদোগান মনে করছেন দেশ চালানোর ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে নগরগুলোতে জয় পাওয়া জরুরি।
এরদোগানের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি হল, দলের চেয়ারম্যানের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য না থাকলে দল ও দেশের প্রতি তাদের বিশ্বস্ততাও তার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।
দল ও দেশের ইতিহাসে এরদোগানের এধরণের দৃষ্টিভঙ্গি এর আগে দেখা যায়নি। সরকারসমর্থিত ডেইলি সাবাহ পত্রিকায় ১৫ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি চাইছে নিজেদের সবচেয়ে কম ক্ষতি করে ক্ষমতাধর মেয়রদের কাছ থেকে রেহাই পেতে যাদের আনুগত্য নিয়ে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ আছে।
এই প্রতিবেদন থেকে এরদোগানের সভাপতিত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী বোর্ডের এক সভার চিত্র উঠে এসেছে। দলটি এই মেয়রদের আর চাইছে না। তাদেরকে হয় মেয়র পদ থেকে অপসারণ করে দলের সদস্য থাকতে দেয়া হবে অথবা তারা দল থেকে পদত্যাগ করে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে মেয়র থাকবেন।
ওই মিটিংয়ে এমনও আলোচনা হয়েছে যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় তার ক্ষমতা ব্যবহার করে এইসব মেয়রদের অপসারণ করবে। তবে এক্ষেত্রে আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। অর্থাৎ ওইসব মেয়রদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে এরদোগান এবং জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির জন্য আপত্তিকর দুটি প্রশ্ন উঠে আসে। প্রথমত মেয়রদের স্থানীয় রাজনৈতিক ইতিহাস এবং জনসমর্থন। স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাদের অপসারণ দলটির জনসমর্থন হ্রাস করবে। কিন্তু তারা স্বপদে বহাল থাকলেও পরিস্থিতি একই হবে।
দ্বিতীয়ত মেয়রদের বিরুদ্ধে যদি অপসারণ ও পরবর্তীতে আদালতে নিয়ে যাওয়ার মতো গুরুতর কোনো অভিযোগ থেকেই থাকে, তাহলে তারা এখন শুধুমাত্র পদত্যাগ করেই সেসব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন কি না। এই পরিস্থিতি অদূর ভবিষ্যতেই এরদোগানকে কিছু গুরুতর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে। এজন্যই বহির্বিশ্বে সঙ্গে সমস্যার চেয়ে অভ্যন্তরীণ এই সমস্যাই তাকে আগে মোকাবেলা করতে হবে।
- Advertisement -
