ইয়েমেনের সার্বিক পরিস্থিতি খুবই ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। খাবার, জ্বালানি ও ওষুধ সরবরাহ করা না হলে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে যে, সময়মতো মানবিক সাহায্য না পৌঁছালে ইয়েমেনে চার লাখ শিশু মৃত্যুবরণ করবে। ২ কোটিরও বেশি মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাহায্য প্রার্থীদের মধ্যে শিশুরই সংখ্যা প্রায় এক কোটি।
এর আগে অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেস, নরওয়ে রিফিউজি কাউন্সিলসহ ১৯টি ত্রাণ সংস্থা এক যুক্ত বিবৃতিতে জানিয়েছিলো, ইয়েমেন মজুদ করা ওষুধ মাত্র এক মাস থাকবে। যদি নতুন ওষুধ না আসে তবে মহামারী আকারে অসুখ ছড়িয়ে পড়বে। পোলিওর মতো রোগও খুবই মারাত্মক হয়ে যাবে। অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুদের জন্য পরিস্থিতি হবে খুবই ভয়াবহ। এই জোট আরও জানায়, ৭০ লাখ দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য মাত্র ছয় সপ্তাহের খাবার রয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ত্রাণ কার্যক্রম বারবার ব্যাহত হওয়ার কারণে দেশটিতে হাজার হাজার শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।
ইয়েমেনে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে বলে জাতিসংঘের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে। সংস্থাটির এপ্রিলের পরিসংখ্যানেই ইয়েমেনে অন্তত ৩৩ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানানো হয়। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ২১ লাখ। ৫ বছরের নিচের ৪ লাখ ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মোট নাগরিকের ৫৫ শতাংশই ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
২০১৫ সালে ইয়েমেন হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে সৌদি আরব ও তাদের অনুগত দেশগুলো।
জাতিসংঘের মতে, এই অভিযানে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। ঘরহীন হয়েছেন ৭০ লাখ মানুষ। তাদের অনেকেরই খাবার, স্বাস্থ্য সুবিধা ও বিশুদ্ধ পানি নেই। এর মধ্যে এপ্রিলে কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন নয় লাখ ইয়েমেনি। দেশটিতে বিমান থেকে বোমা ফেলে মানুষ মারা বন্ধ হয়নি এখনও। ২০১৫ সাল থেকেই ইয়েমেন সামরিক অভিযান চালাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। ৪ নভেম্বর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ঘটনায় ইয়েমেনের ওপর অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরব। স্থল, নৌ ও আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ায় সীমান্তে আটকা পড়েছে অনেক জরুরি ত্রাণ সামগ্রী। সৌদি আরবের যুক্তি, ইরান যেন অস্ত্র সরবরাহ করতে না পারে সেজন্যই এই অবরোধ আরোপ করেছে তারা। ইরান অবশ্য এই অভিযাগ অস্বীকার করেছে। এই অবরোধে আটকা পড়েছে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা অক্সফাম, ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স এর মতো আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো।
জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, এক্ষুণি অবরোধ না তুলে নিলে দেশটিতে মৃত্যু হতে পারে চার লাখ শিশুর। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবরোধ তুলে নিতে সৌদি জোটের অস্বীকৃতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, যুদ্ধের কারণে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।
///মাও
- Advertisement -
