
প্রথমবারের মতো সাংবাদিক আতাউস সামাদ স্মৃতি পুরস্কার পেলেন রয়টার্সের ফটো সাংবাদিক এবিএম রফিকুর রহমান। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সকাল ১১টায় আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার তুলে দেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।

সাংবাদিক শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, কবি হেলাল হাফিজ, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান ও প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আতাউস সামাদ ছিলেন একজন অবিসংবাদিত সাংবাদিক। কাজের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন শতভাগ সচেতন। তার কোনো প্রতিবেদন কেউ কোনোদিন ভুল কিংবা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি।
সাংবাদিকরা বলেন, আমরা আজকাল নিজের মতো করে খবর লিখি। অদৃশ্য সূত্রের ওপর দায় চাপিয়ে দেই। অথচ আতাউস সামাদ এটা করতেন না। তিনি সূত্র ছাড়া কোনো খবর জানাতেন না। তিনি গোজামিল দিতেন না।
এক নজরে ফটো সাংবাদিক এবিএম রফিকুর রহমান
রফিকুর রহমান রয়টার্সে কাজ করছেন ৪০ বছর। ২০০৭ সালে রয়টার্সের বেস্ট ক্যামেরাম্যান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের নানা পট-পরিবর্তনের ঘটনা ধরে রেখেছেন তার ক্যামেরায়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য পেয়েছেন। চার দশকের দীর্ঘ ফটো সাংবাদিক জীবনে বহু দুর্লভ ছবি তুলেছেন, সাক্ষী হয়েছেন ইতিহাসের।
দেশবরেণ্য ফটোজার্নালিস্ট রফিকুর রহমান কৈশোরেই শুরুতেই ক্যামেরাম্যান হতে চেয়েছিলেন। ফিল্মোটোগ্রাফিতেও তার আগ্রহ ছিল। পরে খ্যাতিমান আলোকচিত্রশিল্পী রশীদ তালুকদারের হাত ধরে নিউজ ফটো জার্নালিজমে ক্যারিয়ার শুরু করেন।

১৯৬৯ সালের দিকে ফটো সাংবাদিক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন। ‘ইভিনিং পোস্ট’ নামে একটি পত্রিকায় তিনি ছবি তুলতেন। সারা দিনের ছবি পত্রিকা অফিসে দিয়ে আসতেন দুপুরে। সন্ধ্যার পরপরই সেটি প্রকাশ হতো। এরপর চাকরি নেন ‘দ্য পিপল’ পত্রিকায়। ১৯৭০ সালে দ্য পিপল পত্রিকার হয়ে তিনি পুরোদমে কাজে নেমে পড়েন।

স্বাধীনতা আন্দোলন যখন তুঙ্গে সে সময় ফটোসাংবাদিকতা করেছেন রফিকুর রহমান। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণে বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলেছিলেন রফিকুর রহমান।
স্বাধীন হওয়ার পর দিল্লিতে এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ স্টল সাজানো স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহাসিক ছবি দিয়ে। সে সময় বঙ্গবন্ধু ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন। তার নির্দেশেই বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের জন্ম।
১৯৭৩ সালে দ্য পিপল ছেড়ে বাংলার বাণীতে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সব কিছু বদলে যায়। তখন তিনি কাজ করতেন বাংলাদেশ টাইমসে। ১৯৮১ সালে রয়টার্স টেলিভিশনে কাজের অফার পান তিনি।

২০০৭ সালে বাংলাদেশে আন্দোলনের ওপর কাজ করে বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। সে বছরই রয়টার্সের বেস্ট ক্যামেরাম্যান পুরস্কার পান তিনি। ২০০৮ সালে লন্ডনে গিয়ে সেই পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।
রয়টার্সে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ বাংলাদেশের যত আন্দোলন, শীর্ষ খবর, ব্রেকিং নিউজ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে প্রচার হয়েছে সবই তার করা।
১৯৯৬ সালের পর অন্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম, দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল ধীরে ধীরে কাজ করতে শুরু করেন। রয়টার্সের হয়ে ‘হোস্টাইল এনভায়রনমেন্টাল ট্রেনিং’ করেছেন রফিকুর রহমান।

