
বর্তমান সময়ে একটা করে স্মার্টফোন আমাদের সবার হাতেই আছে ৷ অবসরে বা কাজের ফাঁকে একটু আধটু ফেসবুক আর ইউটিউবে ঘুরে আসাটা এখন প্রতিদিনের ঘটনা। ফেসবুকে ঢুকলেই এখন চোখের সামনে আসে নানা রকম লাইভ ভিডিও। এসব লাইভ ভিডিওর ভিড়ে দেখা যায়, নানা রকম জামাকাপড়, জুতা, কসমেটিক্সের পসরা নিয়ে বসে আছেন অনেকে। বেশিরভাগ বিক্রেতাই নারী। তারা যে শুধু লাইভ করছেন তা না, দিনের বিভিন্ন সময়ে অনলাইনে কেনাবেচার গ্রুপে পণ্যের ছবি আপলোড দিচ্ছেন, পণ্য বিক্রির জন্য চালাচ্ছেন নিজস্ব পেজ। এসব পেজের মধ্যে কিছু কিছু এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। বিশেষ করে নামিদামি বিপণিবিতানগুলোতে কসমেটিকসের পণ্য নকল সনাক্ত হওয়ায় সচেতন নারীরা কসমেটিক্স কেনার জন্য ঝুঁকছেন ফেসবুকের ভেরিফাইড পেজগুলোতে। সেই সাথে, শাড়ি, চাদর, জামা, জুতা, ব্যাগ, ঘর সাজানোর গৃহস্থালী পণ্য তো আছেই। অনলাইনে কিংবা ফেসবুক লাইভে যে পণ্যের ছবি দেখে আপনি অর্ডার দিচ্ছেন ছবির সাথে বাস্তবে তার কতটা মিল? কিংবা আপনি যা অর্ডার করছেন সেটা কি আসলেও হাতে পাচ্ছেন? আপনি আসলে কতটা সচেতন অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারে? কখনো কি অনলাইনে কিছু কিনতে গিয়ে কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে? ৩টি বাস্তব ঘটনা শুনে আসা যাক।
ঘটনা ১: পুরান ঢাকার গৃহিণী নাজিফা। অবসর সময়টা কাটান ফেসবুকেই। একদিন ফেসবুকের একটি গ্রুপে একটা জামার ছবি দেখে ভীষণ পছন্দ হল। ওই সময়ে ওই কাপড়ের ওপর ডিসকাউন্টের অফারও চলছিল। নাজিফা হিসেবে করে দেখলেন ডিসকাউন্টের পর ডেলিভারি চার্জ দিয়ে জামার যে দাম এসেছে তাতে দোকানে গিয়ে কিনলেও এর থেকে দাম বেশিই পড়বে। কাজেই আর কিছু না ভেবে তিনি ইনবক্স করলেন বিক্রেতাকে। বিক্রেতা জানালেন, পণ্যটির ওপর যেহেতু স্পেশাল ডিসকাউন্ট চলছে সেজন্য পণ্যের দামের ৮০% টাকা এখনই বিকাশ করতে হবে। যে ক্রেতা আগে বিকাশ করবেন তার অর্ডারটি কনফার্ম করা হবে। নাজিফা চিন্তায় পড়লেন। জামাটি তার অনেক পছন্দ হলেও বিকাশ করার মত টাকা তার কাছে নেই। তাই প্রতিবেশীর কাছ থেকে কোনভাবে কিছু টাকা জোগাড় করে তিনি বিক্রেতাকে ফোন দিয়ে বললেন তিনি টাকা পাঠাচ্ছেন। অর্ডারটি যেন কনফার্ম করা হয়। বিকাশ করার পর বিক্রেতা পিন নম্বর চাইলে নাজিফা তাকে পিন নম্বর ইনবক্স করলেন। পিন নম্বরটি নিশ্চিত হওয়ার মুহূর্তেই বিক্রেতা নাজিফাকে জানালেন, তিনি টাকা পেয়েছেন। নাজিফা এরপর জিজ্ঞেস করলেন, পণ্যটি তাকে কবে ডেলিভারি দেয়া হবে। এই কথা শোনামাত্র বিক্রেতা নাজিফাকে ফেসবুক থেকে ব্লক করে দেন। নাজিফা তার মোবাইলে কল করেও আর পেলেন না। এরপর তিনি ওই বিক্রেতার নম্বরে অন্য নম্বর থেকে ফোন দিলেন। তার কণ্ঠস্বর শোনামাত্র অপর প্রান্ত থেকে লাইনটা কেটে দেয়া হল। নাজিফার স্বপ্নের সেই জামাও কেনা হয়নি, সেইসাথে হারালেন অনেকগুলো টাকা।
ঘটনা ২: ঢাকার মিরপুর ১ এর বাসিন্দা বোরহান। ফেসবুকের চটকদার লাইভ দেখে অর্ডার করলেন একটি ব্র্যান্ডের ভাল ঘড়ি। বিপত্তি বাধলো তখনই যখন ঘড়িটি তার বাসায় ডেলিভারি দেয়া হল। তিনি ছবিতে বা লাইভ যে ঘড়ি দেখেছেন, বাস্তবের এই ঘড়ির সাথে তার কোন মিল পেলেন না। ইনবক্স করে বিক্রেতাকে সে কথা জানালে বিক্রেতার জবাব, ‘ভাইয়া ইন্টারনেটের স্পিডের জন্য অনেক সময় প্রোডাক্টের ছবি ভাল মত দেখা যায় না, এই জন্য বোধহয় আপনার কাছে এমন মনে হচ্ছে।’ তিনি আরো জানালেন, একবার ডেলিভারি হয়ে যাওয়া জিনিস আর ফেরত নেয়া হয় না। বোরহান আর কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দিলেন। এতক্ষণে বুঝে গেছেন, তিনি ঠকেছেন।
ঘটনা ৩: ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া সুমি ফেসবুকের একটি পেজে কিছু গয়নার ছবি দেখে পছন্দ হওয়ায় অর্ডার দিলেন। দামটা একটু বেশি মনে হলেও ভাবলেন ভাল পেজ, তাছাড়া শুধুমাত্র এই ছোট ছোট জিনিসগুলোর জন্য দোকানে যেতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। যাইহোক, ডেলিভারি আসার পর পণ্য নিয়েও তিনি সন্তুষ্ট। এর কিছুদিন পর বান্ধবীর সাথে মার্কেটে গিয়ে ওই একই রকম কানের দুল, ব্রেসলেট দেখলেন প্রায় অর্ধেক দামে। মনে মনে আফসোস করা ছাড়া তখন আর কী-ই বা করার আছে তখন সুমির?
ফেসবুকে বা অনলাইনে এখন হাজার হাজার পেজ বা সেলার গ্ৰুপ রয়েছে। এদের মধ্যে কোনটা ভাল কোনটা মন্দ তা ধরতে পারাটা আসলেই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কাজেই-
১. অর্ডার দেয়ার আগে পেজ সম্পর্কে বা বিক্রেতা সম্পর্কে বুঝে নিন।
২. চটকদার লাইভ বা ছবি দেখে সাথে সাথেই পণ্য অর্ডার করতে যাবেন না।
৩. যেই জিনিসটি কিনবেন তার দাম সম্পর্কে আগে জেনে তারপর অর্ডার করুন।
৪. আগে থেকে জেনে রাখুন কোন পেজ বা গ্ৰুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। সেই সমস্ত পেজ বা গ্ৰুপ থেকে কেবল অর্ডার করুন।
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করে অনেকেই নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাই অনলাইনে কেনাকাটায় সচেতন হোন। বুঝে, শুনে, দাম জেনে পণ্য কিনুন।
ফামৌ/তুখ/ফাআ
