
করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ এখন আমাদের দেশসহ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে একটি আতঙ্ক। ইতিমধ্যে এটি মহামারী আকারে রূপ নিয়েছে যার প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় কতদিন পর্যন্ত এটি অবস্থান করবে তার সঠিক সিদ্ধান্ত এখনও আলোচনার বিষয়।
বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে এর থেকে বেঁচে থাকার উপায় স্বরূপ নানা পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও সম্পূর্ণ নির্মূল করা যাবেনা। তাই, আমাদের নিজেদেরই উচিত সর্তকতা অবলম্বন করা। কেননা আমরা যদি প্রত্যেকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি তবে হয়তো আরও দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে। যেমন সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, ব্যক্তিগতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং নিজের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি বা ইমিউন সিস্টেম কে বুস্ট করা।
সাধারণত আমরা দেখেছি যাদের বিভিন্ন ধরনের কো-মরবিডিটি আছে যেমন ডায়াবেটিস কিডনি জটিলতা উচ্চ রক্তচাপ এবং বয়স্ক ব্যক্তিগণ করোনা দ্বারা দ্রুত এফেক্টেড হচ্ছেন এবং মৃত্যুবরণ করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের মানুষই এ ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছে কিন্তু যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো অর্থাৎ যাদের কোন কো-মরবিডিটি নেই বা বয়স্ক নয় তারাই দ্রুত সুস্থতা লাভ করছেন। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞগণ করোনা ভাইরাস দূর করতে যার যার নিজের ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন, তাহলে প্রশ্ন আসে, কি করবেন ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে?
আসলে আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তিনটি বিষয়ের দিকে মনোযোগী হতে হবে-
১.খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান
২.ব্যায়াম এবং
৩.পর্যাপ্ত ঘুম
প্রথমেই বলা যাক খাদ্য ও পুষ্টি উপাদানের বিষয়ে। প্রকৃত অর্থে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে যা আমাদের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, সি, সেলেনিয়াম, জিংক সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। সেইসাথে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালরি ও প্রোটিন। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে ফ্লুইড বা পানি গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকাকে একটি ব্যালেন্স ডায়েট তৈরি করতে পারি তাহলেই সকল পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে আমরা পেতে পারি। যেমন-দৈনিক অবশ্যই ভাত বা রুটির সাথে ডাল,মাছ বা মুরগি রাখতে পারি। এর সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে গাঢ়ো সবুজ শাক, লাল বা হলুদ রঙের সবজি রাখতে পারি। সারা দিনে দুই থেকে তিনবার আদা চা, লেমন টি, গ্রিন টি, তুলসী টি বা রঙ চা অল্টার করে খাওয়া যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে অবশ্যই বারে বারে ক্যাফেইনই যেন না খাই সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া সবজি সুপ,চিকেন সুপ, মিক্সড ফ্রুট সালাদ,লেবু পানি,ফ্রুট জুস হতে পারে আমাদের করোনা প্রতিরোধক খাদ্য।
এবার আসি,ব্যায়ামের কথা। অনেকেই ভাবতে পারেন যেহেতু লকডাউন চলছে,বাইরে যাওয়া নিষেধ তাই ব্যায়াম করা সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হল, ঘরেই একটু নির্দিষ্ট সময় ধরে হাঁটুন। বারান্দা বা ছাদে ১০-১৫ মিনিট করে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। ব্রিদিং প্র্যাকটিস করলে ফুসফুস ভালো থাকে তাই সকালে উঠে ৫ -১০ মিনিট এই প্র্যাকটিস করতে পারলে সারাদিন পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেয়ার ক্ষমতা তৈরি হয়।
সবশেষে বলব ঘুমের বিষয়। পরিশ্রমের পাশাপাশি বিশ্রাম প্রয়োজন। সবকিছুর শেষে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বডিতে ফ্রি-রেডিক্যাল তৈরি হবে যা আপনার পুষ্টিং পাওয়ার নষ্ট করবে। সে ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই দৈনিক কমপক্ষে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
পরিশেষে মনে রাখতে হবে, সুশৃঙ্খল থাকলেই আমাদের সুন্দর জীবন পাওয়া সম্ভব। তাই, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সবারই নিজস্ব সচেতনতা ও যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
পুষ্টিবিদ, বি.আর.বি হাসপাতাল লিঃ
