
নগরবাসী যেকোনো সমস্যায় আজও অসীম শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন প্রিয় মানুষটিকে। যিনি ভালোবেসেছিলেন প্রিয় নগরকে। ঘোঁচাতে চেয়েছিলেন নগরীর দুঃখগাঁথা। ভালোবেসে বেধে ছিলেন মায়ার বাহুডোরে। ব্যবসায়ী নেতা, জনপ্রতিনিধি, উপস্থাপক-সব ক্ষেত্রেই ছিলেন সফল। বহু পরিচয়ের ভিড়ে, তিনি হয়ে উঠেছিলেন মানবিক বোধসম্পন্ন একজন গুণী মানুষ। বলছি একজন সৎ রাজনীতিবিদ ও সত্যিকারের নায়ক প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের কথা। তাকে হারানোর মতো কঠিন সত্য, এখনো মেনে নিতে চান না কেউ।
পৃথিবীতে প্রকৃতির নিয়মেই আসে মানব সন্তান। এদের কেউ ঝরে যায়, কেউ আবার প্রখর কিরণে মুখরিত করে চারপাশ। পরশে প্রাণের স্পন্দন আসে জীবনে। তেমনি একজন “আনিসুল হক”।
৫২’র ২৭ সেপ্টেম্বর, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে বাবা শরীফুল হক, মা রওশন আরা হকের কোল আলো করে আসেন পৃথিবীতে। অর্থনীতি নিয়ে পড়েন, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কালের পরিক্রমায় হয়ে হয়ে উঠেন দেশের ইতিহাসে, অন্যতম সেরা উপস্থাপক। দেশের মানুষ যার কথা শুনতো মন্ত্রমুগ্ধের মতো। আশির দশকে জড়িয়ে পড়েন পোশাক শিল্পের ব্যবসায়। সেখানেও সফল, হয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা।
২০০৫ ও ৬ সালে বিজিএমইএ এবং ২০০৮ সালে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি হন আনিসুল হক। সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজকে নেতৃত্ব দেন ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। বেসরকারী খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠাগুলোর সংগঠন বিআইপিপি-এর সভাপতিও ছিলেন তিনি।
পোশাকের বুনন আর শৈল্পিক নকশার মতোই চাইলেন, নগরে, তুঁলির আঁচড় কাটতে। বিশৃঙ্খল রাজধানীর আধুনিকায়নে স্বপ্ন দেখালেন। ২০১৫ সালে কথার জাদুকর হলেন নগর পিতা। জনমানসে জায়গা হলো সবুজ ঢাকার রূপকার হিসেবে। তার স্বল্প সময়ের নেতৃত্বে, বদলে যেতে থাকে রাজধানী ঢাকার চেহারা।
জনগণের চাপাকষ্টে প্রলেপ হয়ে এলেন ঠিকই, কিন্তু অসময়ে চলে যাওয়ায় প্রাপ্তির আকাঙ্খা বাড়ায় বহুগুণে।
তিনি বলতেন সময়ের হিসাব আমরা জানি না। শেষে হার মানেন দুরারোগ্য এক ব্যাধির কাছে। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর, লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে।
এরপর কত কিছুই না ঘটে গেছে। কত উত্থান ! কত পতন ! কিন্তু তার অভাব কি পুরণ হয়েছে? সংকট, আনন্দ, উপমায়, স্বপ্নের ভাজে, এখনো তাকে খুঁজে নগরবাসী। এখন যারাই নগর পিতা হতে চান, দ্বারে দ্বারে স্বপ্ন দেখান, আনিসুল হক হবো।
ব্যক্তি আনিসুল হক হয়তো আর আসবেন না। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর নগর দর্শন। মানুষ সংঘবদ্ধ হলে, পৃথিবী বদলে যেতে পারে। সেই বিশ্বাসে ঢাকাকে বদলে দেয়ার নায়ক হয়তো বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল, কিন্তু চাপা দীর্ঘশ্বাস রয়ে যাবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ও অস্পস্ট স্বরে উচ্চারিত হবে, আমাদের একজন আনিসুল হক ছিলেন।
