
আপনি যদি একজন চাকরিজীবী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য এই লেখাটা অপ্রয়োজনীয় নয়। কিছু বিষয় হয়তো আপনার জানা থাকতে পারে, তবে সাবধান হওয়ার মতো কিছু বারবার স্মরণ করার পেছনে খারাপ কিছু নেই। তাতে বরং নিজেরই ভালো, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে চলতে সাহায্য হয়।
আমরা যারা চাকরি করি, তারা দিনের বেশিরভাগ সময়ই কর্মক্ষেত্রে কাটাই। কারো প্রতিষ্ঠান ছোট আবার কারোটা বড়। সবাইকেই সহকর্মীদের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হয়। কিন্তু সেখানে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলা বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন এটা কখনোই জরুরি নয় যে, কোনো বিষয় সম্পর্কে আপনি যেমন করে ভাবেন, আপনার আশপাশের মানুষগুলোও ঠিক সেভাবেই চিন্তা করবে। আর তাছাড়া এক এক জনের চিন্তাধারা এবং দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম। সেটাই স্বাভাবিক।
তাই কর্মক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে পুরোপুরি পেশাদারি মনোভাবের। কারণ কর্মজীবনে আপনি যদি নিজের জায়গা তৈরি করে নিতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে অনেক বিষয় ভেবেচিন্তে করতে হবে। হুটহাট কোনো কাজ করা যাবে না এবং অপ্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে না।
সবাইকে খুশি করার চেষ্টা:
কোথায় যেন পড়েছিলাম ‘একটা মানুষ কখনোই সবার কাছে প্রিয় হতে পারে না’। যে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে চায় তাকে ব্যক্তিত্বহীন হতে হয়। কারণ সবার কাছে প্রিয় হতে চাইলে সবার সব কথায় সহমত প্রকাশ করতে হয়। সেখানে নিজস্ব কোনো মতামত থাকে না। ধরুন, আপনার উপরস্থ কাউকে খুশি করার জন্য আপনি তার কোনো কাজ বা কথায় সহমত পোষণ করলেন। কিন্তু বেপারটা সেখানেই শেষ হবে না। এর বিপরীত মতামতে যিনি থাকবেন আপনি তার কাছে অপ্রিয় পাত্র হবেন। তাই এই ধরণের অবস্থার সম্মুখীন হলে নীরবতাই হবে আপনার জন্য শ্রেয়।
রাজনৈতিক মতাদর্শ:
রাজনীতি বিষয়টি খুবই জটিল এবং স্পর্শকাতর। আপনি কোন দল সমর্থন করেন বা কোন নেতার মতাদর্শ আপনার পছন্দ সেটা সব জায়গায় বলার দরকার নেই। এতে করে সহকর্মীদের মধ্যে বিরোধিতা তৈরি হতে পারে। কারণ সবাই যে একই আদর্শের অনুসারী হবে, এমনটা ভাবা বোকামি। রাজনীতি নিয়ে বেশি আলোচনা করতে গেলেই, সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হবে। যেটা কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক নষ্টের কারণ হতে পারে।
সমালোচনা থেকে বিরত থাকা:
অন্যের বিষয়ে কথা বলার সময় সংযত থাকুন। এর কারণ দুটি- প্রথমত আপনি যার কাছে কথাগুলি বলছেন, হতে পারে ওই ব্যক্তি সেই কথাগুলো গোপন রাখতে পারবেন না। আর দ্বিতীয়ত- যার সম্পর্কে বলছেন, তিনি হয়তো এমন কোনো পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, যার সম্পর্কে আপনি অবগত নন। তাই না জেনে কাউকে নিয়ে মন্তব্য বা সমালোচনা করা উচিত নয়।
কারো যোগ্যতা নিয়ে সংশয় নয়:
যেকোনো কর্মক্ষেত্রেই এমন কর্মী মিলবে, যারা নিজের কাজের জন্য যোগ্য নন। যদি আপনি তাদের কাজের মান বাড়াতে সহায়তা করতে পারেন, তো ভালো কথা। কিন্তু যদি না পারেন, তাহলে ওই কর্মীদের সম্পর্কে আপনার চিন্তা অন্যদের কাছে প্রকাশ করতে যাবেন না। কর্মক্ষেত্রে কারও অযোগ্যতা নিয়ে কথা বললে, আপনার নিজেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। যার বা যাদের সঙ্গে আপনি এসব নিয়ে আলোচনা করবেন, তারাই আপনাকে খারাপ চোখে দেখবে। যেটি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য মোটেও ভাল হবে না। আর তাছাড়া সহকর্মীদের অযোগ্যতার বিষয় তুলে ধরার দায়িত্ব কিন্তু আপনার ওপর দেয়া হয়নি।
আয়ের তথ্য:
অনেকেই অফিস থেকে নিজের কাজের বাইরেও আলাদা কিছু কাজ করে বাড়তি আয়ের উৎস খুঁজে নেন বৈধভাবেই। সেই উপার্জনের কথা জনে জনে না বলে বেড়ানোই ভালো। কারণ তখন সহকর্মীরা আপনার সাথে নিজেদের তুলনা করতে শুরু করবে। আবার অনেকে আপনার সে বিষয়ে মুখ খোলার ব্যাপারটাকে ‘শো-অফ’ বলে ধরে নেবে। অতএব এই ব্যাপারে সর্তক থাকুন।
একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য:
নিজের একান্ত বিষয় নিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে যাবেন না। তেমনি অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়েও খুব আগ্রহ দেখাবেন না। কোনো কলিগ যদি নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ভুলক্রমে আপনার সামনে কথা বলেও বসে, তার প্রেক্ষিতে নিজে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার চিন্তা-ভাবনা নিজের ভেতরেই রাখুন। হালকা কিছু বলে বিষয়টা এড়িয়ে যান। কারো প্রেম ভালোবাসা বা যৌন জীবনসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে আলাপ করবেন না। মনে রাখবেন এগুলো যার যার গোপনীয় বিষয়। এসবের প্রতি সম্মান দেখান।
নিজের কথা বলার সময়ও সচেতন থাকুন। নিজের বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে আপনি বিভিন্ন ধরণের পাগলামি বা হাসি-ঠাট্টা করতে পারেন। সেগুলি কলিগদের কাছে বলে বেড়ানোর কিছু নেই। প্রকৃত বিচক্ষণ ব্যক্তিরা এই দিকগুলো খুব সর্তকতার সঙ্গে এড়িয়ে চলেন।
এতসব নিষেধ শোনার পর আপনার মনে হতে পারে, চুপচাপ থাকাই হয়তো সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এটা কিন্তু মোটেও সঠিক ভাবনা নয়।
বর্তমান যুগে মুখচোরা স্বভাবের হয়ে একটি শক্তিশালী ক্যারিয়ার গড়া প্রায় অসম্ভব। তাই নিজেকে কোথায়, কীভাবে, কতখানি প্রকাশ করবেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই সেক্ষেত্রে সচেতন হোন। আর নিজের ক্যারিয়ার সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করুন।
জাক/শাই/ফাআ
