24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০২৩

‘তোমার চোখ আমাদের মতো নীল নয়’

বিশেষ সংবাদ

- Advertisement -

বলছি টনি মরিসনের কথা। স্কুলে থাকতে এক শেতাঙ্গ সহপাঠী তাঁর চোখ দেখে বলেছিলো, ‘তোমার চোখ আমাদের মতো নীল নয়। তুমি নিশ্চয়ই চাও, তোমার চোখও এ রকম সুন্দর, নীল হোক?’

 

ছোটবেলার সহপাঠীর এমন কৌতুহলী প্রশ্ন দাগ কেটে যা টনি মরিসনের মনে। অনেক পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিশ বছর পরও সেই নীল চোখের স্বপ্ন তাড়া করে বেরাতে কালো চোখের কালো মেয়েটিকে।’

 

টনি মরিসন বলেছিলেন, ‘নীল চোখ, সোনালি চুল, সাদা চামড়ার বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, নির্মম কিন্তু অপরূপ, শেকলে বাঁধা কিন্তু ডানায় ভর দিয়ে উড়তে উন্মুখ, সেটাই বারবার লিখেছি আমি। কারণ মৃত্যুই যেমন জীবনের চরম ব্যঞ্জনা, ভাষা তেমনই জীবনের।’

 

অবশেষে ১৯৭০ সাল। প্রকাশিত হয় টনি মরিসনের প্রথম উপন্যাস- দ্য ব্লুয়েস্ট আই। আর কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের ছেড়ে ৮৮ বছর বয়সে তিনি ওপারে চলে গেলেন গত ৫ আগস্ট।

 

মরিসনের লেখক পরিচিতিতে এই ‘কৃষ্ণাঙ্গ’ শব্দটা খুব জরুরি। কারণটা এই নয় যে, তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ লেখক, যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এর কারণ লুকিয়ে আছে তাঁর উপন্যাসের প্রতিটি পাতায়।

 

১৯৩১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ে রাজ্যে এক আফ্রো-মার্কিন পরিবারে জন্ম নেন ক্লো আর্ডেলিয়া ওফর্ড। ক্লো-র বয়স যখন মাত্র দুই, ঠিক সময়ে ভাড়া না দেয়ায়, তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল বাড়িওয়ালা। মরিসন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘সেই ভয়াবহ ঘটনাতেও মা-বাবাকে বিচলিত হতে দেখিনি। বাবা-মা বলতেন, নির্মম পরিস্থিতির মধ্যেও বেঁচে থাকার রস খুঁজে নিতে হয়। তাদের সেই কথাটাই আমার জীবনের চালিকাশক্তি।’

 

১২ বছর বয়সে ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ করার সময়, নিজের নাম পাল্টে ‘অ্যান্টনি’ করে নেন ক্লো। সেই অ্যান্টনি থেকেই ‘টনি’র জন্ম। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে বিয়ে করেছিলেন জামাইকান স্থপতি হ্যারল্ড মরিসনকে। বছর কয়েক পরে বিয়ে ভেঙে গেলেও, টনির নামে থেকে যায় তার ‘মরিসন’ পদবিটি।

 

১৯৭৩ সালে বের হয় তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস— সুলা। লেখক খ্যাতির জন্য তাকে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। একে একে প্রকাশিত হয় তাঁর আরও নয়টি উপন্যাস। ১৯৮৭ সালে বেরোয় ‘বিলাভেড’। এই উপন্যাস তাকে পরের বছরই এনে দেয় পুলিৎজার পুরস্কার। একই উপন্যাসের জন্য পান আমেরিকান বুক অ্যাওয়ার্ড। ১৮৬০ সালের একজন কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানের কঠোর জীবন ছিল এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু।

 

১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান টনি মরিসন। মার্কিন সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে পান ন্যাশনাল বুক ফাউন্ডেশনের মেডেল অব ডিস্টিংগুইশড কন্ট্রিবিউশন সম্মাননা। ২০১২ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমে ভূষিত করেন।

 

কর্মজীবনে টনি মরিসন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা সংস্থা র‌্যান্ডম হাউসের সম্পাদক হিসেবে।

 

//শাই

- Advertisement -

আরও পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বাধিক পঠিত