
শাড়িতে সব নারীকেই অপূর্ব লাগে। সেটা যদি হয় জামদানি শাড়ি, তাহলে তো কথাই নেই। এমন বাঙালি নারী খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যিনি জামদানি পরতে ভালোবাসে না কিংবা যার আলমারিতে অন্তত একটা জামদানি নেই। জামদানি আমাদের বাঙালি ঐতিহ্যেরই অংশ। মসলিনের উত্তরসূরি বলা হয় একে। সেই মসলিন এখন কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও জামদানি আজও টিকে আছে। দিনের পর দিন সুতোর বুনন দিয়ে এর কারিগররা আজও এর ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন।
জামদানিকে বলা হয় শৌখিন শাড়ি। যত্ন না করলে এটা বেশিদিন টেকানো মুশকিল। জামদানির যত্ন মানেই কিন্তু ভাঁজে ভাঁজে আলমারিতে এক জায়গায় রেখে দেয়া নয়। কিভাবে আপনার প্রিয় জামদানি শাড়িটির যত্ন নেবেন?
ভাঁজ পরিবর্তন করুন:
একই ভাঁজে দীর্ঘদিন জামদানি শাড়ি রেখে দিলে ভাঁজে ভাঁজে এটি ফেটে যায়। আবার আপনি যদি শখের শাড়িটিকে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখেন, সেই ক্ষেত্রেও এটি ফেটে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে ২০ দিন পরপর ভাঁজ পরিবর্তন করে দিন। সুতি বা থান কাপড় পেঁচানোর যে রোলার আছে, বাজার থেকে সেগুলো কিনে আনতে পারেন। এই ধরণের রোলগুলোয় জামদানি শাড়ি পেঁচিয়ে রেখে দিলে তা অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে খেয়াল রাখা জরুরি, যেন এইভাবে রোল করে রাখার পর শাড়িতে কোন ধরণের চাপ না লাগে।
রোদে দিন, শুকিয়ে নিন:
মাসে অন্তত একবার ২০-৩০ মিনিটের জন্য জামদানি শাড়িটি রোদে দিন। এক পাশ ১৫ মিনিট রোদে দিয়ে, উল্টিয়ে অন্যপাশ আরো ১০-১৫ মিনিট ধরে রোদের তাপে শুকিয়ে নিন। এতে শাড়ির তন্তুগুলো মজবুত থাকবে। শাড়িটিও বেশিদিন টেকসই হবে। শাড়ি পরার পর ঘাম অথবা বৃষ্টির পানি লাগলে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নিন। সম্ভব হলে রোদে দিন।
পানির ছোঁয়ানো বারণ:
মনে রাখবেন জামদানি শাড়িতে পানি ছোঁয়ানো একেবারেই বারণ। সাবান পানি কিংবা পানিতে ধুলে এর সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ভালো কোন ড্ৰাইওয়াশে দিয়ে আপনার শাড়িটি পরিষ্কার করিয়ে নিতে পারেন।
অবহেলা নয়:
অন্য কাপড়ের চাপে জামদানি শাড়ি ভাঁজে ভাঁজে ফেটে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই জামদানি শাড়িটি অন্য সব কাপড়ের ওপরে রাখুন। হালকা রঙের জামদানি অনেকদিন অবহেলায় পড়ে থাকলে রং নষ্ট হয়ে যায়। একই কথা প্রযোজ্য গাঢ় রংয়ের ক্ষেত্রেও। এরকম হলে জামদানিটি বের করে বাতাসে বা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
কাঁটা করতে দিন:
অনেকদিনের ব্যবহারে যদি দেখেন প্রিয় জামদানিটি নরম হয়ে গেছে, তাহলে এটি কাঁটা করতে দিন। কাঁটা করতে ১৫ দিনের মতো সময় লাগে। ভালো কারিগর বা তাঁতীর কাছে শাড়িটি নিয়ে গেলে ৪০০-৫০০ টাকার বিনিময়ে তারা আপনার শাড়িটি কাঁটা করে দেবেন। এতে আপনার প্রিয় শাড়িটি আরো কিছুদিন ভালো থাকবে।
জামদানি আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অংশ। তাই প্রতিটি উৎসব আয়োজনে সাজুন জামদানির রংয়ে। আমরা যদি এর ঐতিহ্যের কথা ভুলে যাই, তাহলে মসলিনের মতো এটিও হয়তো কালের গহ্বরে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
ফামৌ/শাই/ফাআ
